PC Header Top Ads

Type Here to Get Search Results !

Display Responsive Ads

শব্দ দূষণ ও প্রতিরোধ

 শব্দ দূষণ কি বা শব্দ দূষণ কাকে বলে?


মানুষের শ্রবন ইন্দ্রিয় দ্বারা নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দই গ্রহন করতে পারে। অতিরিক্ত জোরালো শব্দ মানুষের শরীরে বিরুপ প্রভাব পড়ে।

আমাদের পরিবেশের উচ্চমাত্রার শব্দের প্রভাবে, যেমন- গাড়ীর হর্ণ, মাইকের আওয়াজ, বাজির শব্দ, এরোপ্লেনের শব্দ, কলকারখানার শব্দ ইত্যাদি মানুষের স্থায়ী বোধিরতা অথবা অন্য কোনো শারিরীক অসুস্থতা দেখা যায়, একেই শব্দ দূষণ বলে। 



শব্দ দূষণ এর কারন


যানবাহন চলাচলের জন্য শব্দ দূষণঃ


(ক) স্থলপথে পরিবহনজনিত শব্দ দূষণঃ 

প্রতি বৎসর যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে যার ফলে বাড়ছে শব্দ দূষণ। গাড়ীর গতি বাড়লে শব্দ দূষণের পরিমাণ বেশী হয়। ডিজেল ইঞ্জিনচালিত ভারী লরি সবচেয়ে বেশী শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে। এছাড়াও গাড়ীতে ব্যবহৃত এয়ার হর্ন বা বৈদ্যুতিক হর্নের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ভীষণভাবে শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে।


(খ) বিমান পরিবহণজনিত শব্দ দূষণঃ 

বিমানবন্দরে এরােপ্লেন ওড়বার সময় বা নামবার সময় এরােপ্লেনের ইঞ্জিনের প্রচণ্ড শব্দ দূষণ হয়, গবেষণার দ্বারা দেখা। গেছে সে সমস্ত এলাকার জনসাধারণের মধ্যে মানসিক রােগগ্রস্ত লােকের সংখ্যা বেশী গর্ভবতী মায়েদের বা ছােট শিশুদের এই শব্দে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশী থাকে।


(গ) রেল পরিবহণের শব্দ দূষণঃ 

রেলপরিবহনে উৎপন্ন শব্দ দূষণের মাত্রা যানবাহনের চলাচলের শব্দ দূষণের মাত্রা থেকে কম। ট্রেন চলাচলে ও ট্রেনের হুইস প্লাটফর্ম ও রেলস্টেশনের আশেপাশে বাস করা মানুষদের উপর শব্দ দূষণজনিত প্রভাব সৃষ্টি করে। ট্রেনের হুইসল থেকে উৎপন্ন শব্দের প্রাবল্য ৯০ ডেসিবেল যা আমাদের শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের ক্ষতি করে। 



নিকটবর্তী শব্দদূষণঃ 

আমাদের নিজেদের বাড়ীতে বা প্রতিবেশীর বাড়ীতে জোরে চালানাে টিভি, টেপ রেকর্ডার, সাউন্ড বক্স শব্দদূষণ সৃষ্টি করে। এ ধরণের শব্দের প্রভাবে বৃদ্ধ, শিশু, হৃদরােগে আক্রান্ত ব্যক্তি বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অস্বাভাবিক জোরে বাজানাের ফলে জনজীবন নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক ব্যাধির শিকার হয়। ছােট শিশু বা কিশাের অতিরিক্ত শব্দের প্রভাবে অনেকদিন থাকলে তাদের আচরণে ত্রুটি দেখা যা কিনা পরবর্তী জীবনে তাদেরকে ধ্বংসাত্মক মনােবৃত্তির দিকে প্ররােচিত করে।




সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শব্দদূষণ : 


আমাদের যেকোন সামাজিক বা অনেকক্ষেত্রে অনেক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হৈ চৈ না হলে কারও কাছে অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়। মিছিল, জনসভা, পূজোপার্বণ, বিয়েবাড়ী, অধিক রাতে গানের জলসা, ডিস্কো নাচ প্রভৃতি ক্ষেত্রে লাউডস্পীকার মাইকের অনিয়ন্ত্রিত অবাধ ব্যবহার, কোন আনন্দ উৎসবে বাজি ফাটানাে প্রভৃতি জনজীবন অতিষ্ট করে তােলে। 




শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে অবসাদঃ


৯০ ডেসিবেল মাত্রার কাছাকাছি শব্দ শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের অবসাদ সৃষ্টি করে। অবসাদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী হয় যদি শব্দের কম্পাঙ্ক ৪,০০০ হার্জ হয়। এই ধরণের শব্দের প্রভাবে কানে ঘণ্টা বাজার শব্দ বা ভো ভো আওয়াজ শােনা যায়। বধিরত্ব ও শব্দদূষণে শ্রবণ ক্ষমতা একেবারে লােপ পেতে পারে। বহুদিন ধরে শব্দদূষিত এলাকার মধ্যে থাকলে ধীরে ধীরে শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।




শব্দদূষণের ক্ষতিকারক দিকগুলি কী কী?


(ক) শ্রবণে বাধাঃ 

কথা বলার সময় বা শােনার সময় অন্য কোন শব্দ উপস্থিত থাকলে আমাদের কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধে হয়। যানবাহন বা অন্য কোন শব্দের উপস্থিতি আমাদের সমস্যা সৃষ্টি করে।


(খ) বিরক্তিঃ

শব্দদূষণ বিরক্তি সৃষ্টি করে। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষও অতিরিক্ত শব্দে বিরক্ত ও অস্বাচ্ছন্দ বােধ করে। অতিরিক্ত শব্দে মানুষের মেজাজ খিটখিটে, আচরণে অস্বাভাবিকতা ও মানসিক উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। ছােট শিশুরা অতিরিক্ত শব্দদূষিত এলাকায় বড় হলে তাদের আচরণগত ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়।


(গ) কর্মদক্ষতাঃ 

শব্দদূষণের প্রভাবে মানুষ ক্লান্তি বােধ করে। বিভিন্ন পেশায় যারা নিযুক্ত আছেন শব্দদূষণের প্রভাবে তাদের মানসিক অবসাদ বা কাজে অনীহার সৃষ্টি হয়। যারা মানসিক কাজ করেন তাদের কর্মদক্ষতা হ্রাস পায় এবং এক সময় কানের শ্রবণ ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে কমে যেতে পেতে পারে। 



শব্দদূষণে শারীরবৃত্তীয় ক্ষতি—মস্তিষ্কের কাজের উপর শব্দদূষণের প্রভাবঃ


(ক) শব্দদূষণের ফলে স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে বমিবমি ভাব, মাথা ঝিমঝিম প্রভৃতি নানা ধরনের শারীরিক অস্বস্তি সৃষ্টি করে। 

(খ) অনেকদিন ধরে শব্দদূষণের হতে থাকলে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। 

(গ) সুস্থ শরীর বা মনের জন্য নির্দিষ্ট সময় ধরে ঘুমের প্রয়ােজন। শব্দদূষণ হৃদপিণ্ডের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। রক্তচাপ শব্দের প্রভাবে বৃদ্ধি পায়। শব্দদূষণের কারণে শ্বাস প্রশ্বাসের হার পরিবর্তিত হয়। উচ্চমাত্রার তীক্ষ্ণ শব্দের প্রভাবে দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস হয়। শব্দদূষণের প্রভাবে রাতকানা হবার সম্ভাবনা থাকে। চোখের পিউপিল ডায়লেশন ঘটে। শব্দদূষণের প্রভাবে বিভিন্ন রঙের আলাে চেনার ক্ষমতা হ্রাস‌ পায় এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।


 

আরো পড়ুনঃ মৃত্তিকা দূষণ কীভাবে রোধ করা যায়?


শব্দ দূষণ প্রতিরোধেঃ


শব্দ দূষণ সহ আরো যে কোন দূষণ প্রতিরোধে সরকার আগেই আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে আমরা প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণ করে চলেছি। 

শব্দ দূষণকে প্রতিরোধ করতে যে সকল কারণের জন্য শব্দ দূষণ হচ্ছে, তাকে নির্মূল করতে হবে।


  • (i) শব্দ বাজি পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। 

  • (ii) যানবাহনে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। যানবাহন বেশি পুরনো হয়ে গেলে নতুন নিতে হবে। 

  • (iii) কলকারখানা লোকালয় থেকে দূরবর্তী স্থানে প্রতিস্থাপন করতে হবে। কলকারখানায় সীমানা উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখতে হবে। 

  • (iv) উচ্চ আওয়াজে মাইক বাজানো বন্ধ করতে হবে। 

  • (v) স্কুল-কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাছাকাছি গাড়ির হর্ন বাজানো বন্ধ করতে হবে। 

  • (v) বাড়িতে মোবাইল, রেডিও-টিভি বেশি জোরে চালানো যাবেনা। 

  • (vi) ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে রেললাইনের দুপাশে দেওয়াল করে তুলতে হবে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Section