PC Header Top Ads

Type Here to Get Search Results !

Display Responsive Ads

ভারতের বিভিন্ন প্রকার জলসেচ পদ্ধতি


জলসেচ পদ্ধতি

ভারতের জলসেচ পদ্ধতি মোটামুটি পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়



কূপ এর মাধ্যমে জলসেচ

(i) কূপ এর মাধ্যমে জলসেচ কাকে বলেঃ নদী উপত্যকা অঞ্চলের নরম মাটিতে পাতকূয়া খনন করে কপিকল, পারসিক চাকা, রেতপ্রথা, জন্তু বাঁ হাত দিয়ে টেনে যে জলসেচ করা হয় তাকে কূপ এর মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থা বলে।


(ii) কূপ খননের কারণঃ যে সব অঞ্চলে কৃষি জমির কাছাকাছি কোন নদী প্রবাহিত হয়নি বা নদীতে সারা বছর জল থাকে না এবং ভূগর্ভস্থ জলস্তর খুব বেশি নীচে নয় সেখানে কূপের মাধ্যমে জলসেচ সুবিধাজনক।


(iii) অবস্থানঃ উত্তর প্রদেশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রের যেসব অঞ্চলে জলস্তর ভূপৃষ্ঠের বেশি নিচে নয় সেখানে এই প্রকার জল সেচের চালু।


(iv) প্রকারঃ কূপ দু'প্রকারের - (ক) স্থায়ী কূপঃ যেসব কূপ থেকে সারা বছর জল পাওয়া যায় তাদের স্থায়ী খুব বলে। এগুলির চারপাশ সাধারণত বাঁধিয়ে নেওয়া হয়। এগুলি পাকা কূপ। (খ) অস্থায়ী কূপঃ যেসব কূপ থেকে কয়েকটি নির্দিষ্ট ঋতু ছাড়া জল পাওয়া যায় না তাদের অস্থায়ী কূপ বলে।


(v) সেচের পরিমাণঃ ভারতে প্রায় ৫০ লক্ষ কূপ রয়েছে। এ থেকে ভারতে প্রায় ১৫ শতাংশ জমিতে জলসেচ করা হয়। ভারতে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে জমিতে জলসেচ করা হয়।



নলকূপ এর মাধ্যমে জলসেচ

(i) নলকূপ এর মাধ্যমে জলসেচ কাকে বলেঃ পলি মৃত্তিকা যুক্ত অঞ্চলের নরম মাটিতে লোহা বা পলিথিনের পাইপ বসিয়ে বিদ্যুৎ, ডিজেল বা কেরোসিন চালিত পাম্পের সাহায্যে কৃষি জমিতে যে সেঁচ কার্য করা হয় তাকে নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ বলে।


(ii) নলকূপ খননের কারণঃ যেসব অঞ্চলের মাটি নরম ও জলস্তর খুব নিচে নয় এবং অন্য কোন সেঁচ পদ্ধতি সম্ভব হয় না, সেখানে নলকূপ খননের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়।


(iii) অবস্থানঃ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়।


(iv) প্রকারঃ নলকূপ দু'প্রকারের হয় - (ক) গভীর নলকূপঃ ভূগর্ভের অত্যন্ত গভীর থেকে নলকূপের মাধ্যমে জল তুলে সেঁচ কার্য করা হলে তাকে গভীর নলকূপ বলে। (খ) অগভীর নলকূপঃ ভূগর্ভের অল্প গভীর থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে সেঁচ কার্য করা হলে তাকে অগভীর নলকূপ বলে।


(v) সেচের পরিমাণঃ ভারতে প্রায় ৩১ হাজার নলকূপ রয়েছে এবং এগুলি থেকে ভারতের প্রায় ৬০ লক্ষ হেক্টর জমিতে জলসেচ করা হয়। নলকূপের মাধ্যমে ভারতের প্রায় ২৩ শতাংশ জমিতে সেঁচ কার্য করা হয়।


(vi) অবস্থানঃ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়।


(vi) প্রকারঃ‌ নলকূপ দু'প্রকারের হয় - (ক) গভীর নলকূপঃ ভূগর্ভের অত্যন্ত গভীর থেকে নলকূপের মাধ্যমে জল তুলে সেঁচ কার্য করা হলে তাকে গভীর নলকূপ বলে। (খ) অগভীর নলকূপঃ ভূগর্ভের অল্প গভীর থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে সেঁচ কার্য করা হলে তাকে অগভীর নলকূপ বলে। 


(vii) সেঁচের পরিমাণঃ ভারতে প্রায় ৩১ হাজার নলকূপ রয়েছে এবং এগুলি থেকে ভারতের প্রায় ৬০ লক্ষ হেক্টর জমিতে জলসেচ করা হয়। নলকূপের মাধ্যমে ভারতের প্রায় ২৩ শতাংশ জমিতে সেঁচ কার্য করা হয়। কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থায় ভারতে উত্তরপ্রদেশ প্রথম ও রাজস্থান দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।




পুকুর ও জলাশয় এর মাধ্যমে জলসেচ

(i) পুকুর ও জলাশয় এর মাধ্যমে জলসেচ কাকে বলেঃ কঠিন অপ্রবেশ্য শিলা ও ঢেউ খেলানো নিচু জমিতে বর্ষাকালে বৃষ্টির জল সঞ্চিত থাকে। ফলে পুকুর, দীঘি বা অন্য কোন জলাশয় থেকে জল তুলে যে সেঁচ কার্য করা হয় তাকে জলাশয়ের মাধ্যমে সেঁচ কার্য বলে।


(ii) জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ এর কারণঃ যে সব জায়গায় নদীর সংখ্যা কম, সহজে কূপ বা নলকূপ খনন করা সম্ভব নয়, খালের মাধ্যমে জলসেচের সুযোগ কম সেই সব জায়গায় বৃষ্টির সঞ্চিত জলকে কাজে লাগিয়ে এই পদ্ধতির সেঁচ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।


(iii) অবস্থানঃ দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটকে জলাশয় পদ্ধতির প্রচলন সবচেয়ে বেশি।


(iv) পদ্ধতিঃ জলাশয় গুলি থেকে ডোঙ্গা, পাম্পিং মেশিন প্রভৃতির সাহায্যে জল তুলে সেঁচ কার্য করা হয়।


(v) সেচের পরিমাণঃ ভারতের পাট সেঁচসেবিত এলাকার প্রায় ৪ শতাংশ জমিতে এই পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয়। এই পদ্ধতিতে জলসেচ ব্যবস্থায় অন্ধ্রপ্রদেশ প্রথম ও তামিলনাড়ু দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।




খাল এর মাধ্যমে জলসেচ

(i) খাল এর মাধ্যমে জলসেচ কাকে বলেঃ পলি গঠিত অঞ্চলের নরম মাটিতে খাল কেটে নদী থেকে জল তুলে যে সেঁচ কার্য করা হয় তাকে খালের মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থা বলে।


(ii) খালের মাধ্যমে জলসেচের কারণঃ যে সব অঞ্চলে কৃষি জমির কাছে দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং ভূমির ঢালও খুব বেশি নয়, সেখানে নদী থেকে খাল কেটে জলসেচ করা সুবিধাজনক বলে এই প্রকার জল সেচ পদ্ধতি গড়ে উঠেছে।


(iii) অবস্থানঃ পাঞ্জাব সমভূমি, উত্তরপ্রদেশের গাঙ্গেয় সমভূমি এবং মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা ও কাবেরী নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে খালের মাধ্যমে সেচকার্য অধিক করা হয়।


(iv) প্রকারঃ সেচ খাল দু'পকার - (ক) নিত্যবহ খালঃ যে সব খাল বারো মাস জল থাকে এবং বারো মাস সেঁচ কার্য করা যায় তাকে নিত্যবহ খাল বলে। বরফ গলা জলে পুষ্ট নদী থেকে এই প্রকার খাল কাটা হয়। দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে নিত্যবহ খাল এর সংখ্যা অনেক বেশি। (খ) প্লাবন খালঃ যে সব খাল থেকে বারো মাস জলসেচ করা সম্ভব হয় না, কেবলমাত্র বর্ষাকালে করা হয় তাদের প্লাবন খাল বলে। এই প্রকার খালগুলি সাধারণত বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদী থেকে কাটা হয়। উত্তর ভারতের তুলনায় দক্ষিণ ভারতের প্লাবন খাল এর সংখ্যা বেশি।


(v) সেচের পরিমাণঃ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ১.৬ লক্ষ কিমি সেচ খাল রয়েছে। এদের মধ্যে উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ ৫০ শতাংশ সেচখাল বিস্তৃত রয়েছে। ভারতের মোট সেচ সেবিত এলাকার ৩৪ শতাংশ জমিতে এই পদ্ধতিতে সেঁচ কার্য করা হয়।





অন্যান্য পদ্ধতি এর মাধ্যমে জলসেচ

ভারতের অন্যান্য সেঁচ পদ্ধতি গুলির মধ্যে প্রধান হল

(i) রিভার লিফট ইরিগেশন এর মাধ্যমে জলসেচঃ নদী থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে যে সেঁচ কার্য করা হয় তাকে রিভার লিফট ইরিগেশন পদ্ধতি বলে। হরিয়ানার জহরলাল নেহরু প্রজেক্ট ভারতের বৃহত্তম রিভার লিফট ইরিগেশন প্রকল্প বলে।

(ii) প্রস্রবণঃ ভারতে বিভিন্ন প্রস্রবণ থেকে সেঁচ কার্য করা হয়।



আরো পড়ুনঃ  ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয় ও গুরুত্ব



 ভারতের জলসেচ mcq 


১. দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে বেশি জলসেচ হয় কোন পদ্ধতিতে?
উঃ কূপ ও নলকূপের সাহায্যে।


২. কুশান আমলে জলসেচ প্রকল্প গুলি কি নামে পরিচিত ছিল?
উঃ ইস্তিখান ও নাউকিনস্ক, সালার-কারাসু-ডিজহুন, ইত্যাদি।


৩. দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ অধিক প্রচলিত কেন?
উঃ কূপ ও নলকূপ খনন করা সহজ নয় এবং খালের মাধ্যমে জলসেচের সুযোগ কম।


৪. জলাশয় পদ্ধতিতে জলসেচ কোন রাজ্য প্রথম?
উঃ অন্ধ্রপ্রদেশ।


৫. ভারতের প্রধান জলসেচ পদ্ধতি কোনটি?
উঃ কূপ ও নলকূপ।


৬. ভারতের সর্বাধিক জলসেচ করা হয় কোন রাজ্যে?
উঃ পাঞ্জাব।


৭. ভারতের সেচের বৃহত্তম উৎস কি?
উঃ কূপ ও নলকূপ।


৮. প্লাবন খাল এর উদাহরণ দাও?
উঃ গোদাবরী ব-দ্বীপ খাল, ‌দামোদর খাল প্রভৃতি।


৯. জলাশয় এর মাধ্যমে জলসেচ বহু প্রচলিত কোথায়?
উঃ দক্ষিণ ভারতে, যেমন- অন্ধ্রপ্রদেশ।


১০. ভারতের দীর্ঘতম প্লাবন খাল এর নাম কি?
উঃ ইন্দ্রা গান্ধী খাল।


১১. ভারতে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে সর্বাধিক জলসেচ করা হয় কোন রাজ্যে?
উঃ উত্তর প্রদেশ।


১২. একটি River Lift Irrigation -এর উদাহরণ দাও?
উঃ হরিয়ানার জওহরলাল নেহরু প্রজেক্ট।


১৩. ভারতের সেচ খাল কয় প্রকার ও কি কি?
উঃ দুই প্রকার, নিত্যবাহ খাল ও প্লাবন খাল।


১৪. সেচ খালের মাধ্যমে সর্বাধিক জলসেচ করা হয় কোন রাজ্যে?
উঃ উত্তর প্রদেশ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Section