PC Header Top Ads

Type Here to Get Search Results !

Display Responsive Ads

হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা


হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে লেখ

হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা টিকা


হরপ্পা সভ্যতার অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রেই উন্নত নগরজীবনের বিকাশ ঘটেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এই সভ্যতার অন্যতম নগরগুলি ছিল হরপ্পা, মহেন-জো-দারাে, কালিবান, চানহুদারাে, কোটদিজি, আলমগিরপুর, রংপুর, বানওয়ালি, লােথাল,  সুরকোটরা, রােজদি প্রভৃতি। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে বিকশিত হওয়া এই সভ্যতায় উন্নত রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, পয়ঃপ্রণালী, স্নানাগার, শস্যাগার প্রভৃতির নির্মাণ ও নির্মাণ কৌশল উন্নত নগর সভ্যতার পরিচয় বহন করে। ঐতিহাসিক মর্টিমার হুইলার মনে করেন যে, হরপ্পা ও মহেন-জো-দারাে নগর দুটি নির্মাণকালে সংগঠকরা নগর পরিকল্পনাবিদ্যায় যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন। এই সভ্যতার নগর পরিকল্পনার প্রধান দিকগুলি ছিল—



১. জীবনযাত্রার সাদৃশ্যঃ

হরপ্পার বিভিন্ন নগরগুলিতে সমাজ ও সংস্কৃতি মােটামুটি একই ধরনের ছিল। বিভিন্ন নগরের মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব থাকলেও নগরগুলির পরিকল্পনা, গঠন রীতি, জীবনযাত্রা প্রণালী প্রভৃতির মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য দেখা যায়। নগরে রাস্তাঘাটের নকশা, ঘরবাড়ি ও অট্টালিকা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি নজর, ওজন ও মাপ ব্যবস্থা মােটামুটি একই ধরনের ছিল।



২. রাস্তাঘাটঃ

হরপ্পা সভ্যতার প্রধান রাস্তাগুলি শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রাস্তাগুলি ছিল প্রশস্ত, সােজা এবং পরিচ্ছন্ন। রাস্তাগুলি ৯ থেকে ৩৪ ফুট পর্যন্ত চওড়া ছিল। প্রধান রাস্তা থেকে একাধিক সরু গলিপথ বেরিয়ে যেত। রাস্তাগুলি সম্পূর্ণ নগরকে বিভিন্ন বর্গাকার বা আয়তাকার ক্ষেত্রে বিভক্ত করত। রাস্তা নির্মাণে চুন, সুরকি, পাথর প্রভৃতি ব্যবহার করা হত। রাস্তার দু-পাশে বাঁধানাে ফুটপাত, ডাস্টবিন ও আলাের ব্যবস্থা ছিল।



৩. ঘরবাড়িঃ

হরপ্পা সভ্যতার শহরগুলিতে গৃহনির্মাণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগুনে পােড়ানাে ইট এবং কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে রােদে শুকানাে ইট ব্যবহার করা হত। ইটগুলি পাতলা ও ছােটো আকৃতির হত। বাড়িতে প্রবেশের জন্য গলিপথ থাকত। বাড়িগুলি প্রাচীরবেষ্টিত থাকত। বাড়িগুলির রাস্তার দিকে কোনাে দরজা-জানালা থাকত না। ফলে দিনের বেলায়ও আলাের অভাব হত। প্রতিটি বাড়িতে রান্নাঘর, শোয়ার ঘর, স্নানঘর, উঠান, কুয়াে প্রভৃতি থাকত। শহরে অসংখ্য দ্বিতল বাড়ি ছিল। মনে করা হয় যে, আয়তাকার উঁচু স্থানের বাড়িগুলিতে প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তিরা এবং নীচু স্থানের বাড়িগুলিতে সাধারণ মানুষ বসবাস করত । ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড। মনে করেন যে, হরপ্পার পৌর শাসকরা সম্ভবত গৃহনির্মাণ সংক্রান্ত আইনকানুন মেনে চলতেন।



৪.স্নানাগারঃ

মহেন-জো-দারাের দুর্গ অঞ্চলে ১৮০ ফুট দীর্ঘ ও ১০৮ ফুট প্রশস্ত একটি বিরাট বাঁধানাে স্নানাগার আবিষ্কৃত হয়েছে। এর জলাশয়টি ৩৯ ফুট লম্বা, ২৩ ফুট চওড়া এবং ৮ ফুট গভীর  ।স্নানাগারটিতে ওঠানামার জন্য দু-দিক থেকে সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল। গ্রীষ্ম ও শীতকালে প্রয়ােজন অনুসারে এখানে ঠান্ডা ও গরম জলের ব্যবস্থা করা যেত। জলাশয়ের এক পাশে কয়েকটি ছোটো ছােটো ঘর ছিল। সম্ভবত স্নানের পর পােশাক পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এই ঘরগুলি ব্যবহার করা হত বলে ড. রামশরণ শর্মা অভিমত দিয়েছেন।



৫. শষ্যাগারঃ

হরপ্পা-সহ বেশ কয়েকটি শহরে শস্যাগারের নিদর্শন মিলেছে। হরপ্পার শস্যাগারটি ২০০ x ১৫০ বর্গফুট উঁচু একটি ভিত্তির ওপর অবস্থিত ছিল। শস্যাগারটির পাশে শ্রমিকদের বস্তির মতাে ঘর ছিল। শস্যাগারটি হরপ্পা সভ্যতায় সম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানার ইঙ্গিত বহন করে। ঐতিহাসিক এ. এল. বাসাম এই শস্যাগারকে বর্তমান কালের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এখানে আপৎকালীন সময়ের জন খাদ্যশস্য মজুত থাকত। স্যার মর্টিমার হুইলার মনে করেন যে, পঞম শতকের আগে পৃথিবীর অন্য কোথাও এত বড়াে শস্যাগারের নিদর্শন মেলেনি।



৬. নগরদুর্গঃ

মহেন -জো-দারােয় চল্লিশ ফুট উঁচু একটি ঢিপির ওপর একটি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা দুর্গটি নগরের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে, দুর্গ-অঙ্কুলের বাড়িগুলিতে শাসকশ্রেণির লােকজন বসবাস করত। কেউ কেউ মনে করেন যে, এই নগরদুর্গ আসলে ছিল এই সভ্যতার পুরােহিত শাসকের রাজপ্রাসাদ।



৭. পয়ঃপ্রণালীঃ

হরপ্পা সভ্যতার রাস্তাগুলির দু-ধারে বর্তমান কালের মতাে উন্নত পয়ঃপ্রণালী ছিল। বাড়ির নােংরা জল। পয়ঃপ্রণালীর সাহায্যে বাইরে বেরিয়ে যেত।পয়ঃপ্রণালীগুলির ওপরে পাথরের ঢাকনা বসানাে থাকত। ঐতিহাসিক এ. এল. বাসাম তার “The Wonder That Was India’গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন যে, “রােমান সভ্যতার আগে অন্য কোনাে প্রাচীন সভ্যতায় এত সুদক্ষ পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা ছিল না।”



৮. ডাস্টবিনঃ

শহরের বাড়িগুলির সামনে ইট দিয়ে বাঁধানাে ডাস্টবিন থাকত। বাড়ির যাবতীয় আবর্জনা এই ডাস্টবিনে জমা হত। সেগুলি নিয়মিত পরিষ্কারের সুব্যবস্থা ছিল।



৯. ম্যানহােলঃ

শহরের নর্দমার সঙ্গে অনেক ম্যানহােল যুক্ত ছিল। এগুলির ওপরে ঢাকনা বসানাে থাকত এবং ঢাকনা খুলে নিয়মিত এগুলো পরিষ্কার করা হত। ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মার মতে, পৃথিবীর আর কোন প্রাচীন সভ্যতা হরপ্পার মতো স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে এত গুরুত্ব দেয়নি ।



১০. রক্ষণশীলতাঃ

ঐতিহাসিক ড. এ. এল  বাসাম বলেছেন যে, এই সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর তীব্র  রক্ষণশীলতা। খননকার্য চালিয়ে এই সভ্যতার নয়টি স্তর পাওয়া গেছে।  বিভিন্ন স্তরে খননকার্য চালিয়ে মোটামুটি একই ধরনের জীবনযাত্রা প্রণালী, নগর পরিকল্পনা ওজন বা মাপ ব্যবস্থা প্রভৃতির সন্ধান পাওয়া গেছে।  অবশ্য শেষদিনের স্তরগুলির  সর্বএই  অক্ষয়ের ছাপ লক্ষ্য করা যায় ।


হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা
হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Section