জোয়ার-ভাটা কাকে বলে?
চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সাগর-মহাসাগর-নদী প্রভৃতির জল একই জায়গায় ছন্দময় উত্থান বা স্ফীত হয় এবং অন্য জায়গায় অবনমন ঘটে বা নেমে যায়। একই স্থানে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সাগরের জলের এই ছন্দময় উত্থান বা স্ফীত হওয়াকে জোয়ার এবং অন্যস্থানের বা সমকোনাঞ্চলে সাগরের জলের নীচু হওয়াকে ভাটা বলে।
মুখ্য জোয়ার কাকে বলে?
আবর্তনকালে পৃথিবীর যে অংশ চন্দ্রের সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী হয় সেই স্থানে চন্দ্রের সর্বাধিক মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে মুখ্য জোয়ার বা চন্দ্র জোয়ার বলে। একে প্রত্যক্ষ জোয়ারও বলে।
মুখ্য জোয়ারের বৈশিষ্ট্য :
(i) পৃথিবীপৃষ্ঠে চাঁদের আকর্ষণের দিকেই মূলত মুখ্য জোয়ার হয়।
(ii) একবার মুখ্য জোয়ারের ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট পর আবার সেই স্থানে মুখ্য জোয়ার হয়।
গৌণ জোয়ার কাকে বলে?
মুখ্য জোয়ারের বিপরীত প্রান্তে অর্থাৎ চাঁদের আকর্ষণের প্রতিপাদ স্থানে বা বিপরীত অংশে প্রধানত কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে গৌণ জোয়ার বলে। একে পরোক্ষ জোয়ারও বলে।
পৃথিবীর ভর কেন্দ্র থেকে গৌণ জোয়ার স্থানের দূরত্ব পৃথিবীর কেন্দ্র চাঁদ থেকে দূরত্ব অপেক্ষা ৪,৭৫৯ কিমি-র অধিক হওয়ায় ওই স্থানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি খুবই কম। এই কারণে ওই স্থানে পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবেই গৌণ জোয়ার হয়।
ভরা কটাল কাকে বলে?
পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে যখন সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী এক সরলরেখায় অবস্থান করে তখন সমুদ্র পৃষ্ঠের জলরাশি সবচেয়ে বেশি ফুলে ওঠে। একে ভরা বা তেজ কোটাল বা ভরা জোয়ার বলে।
ভরা কোটাল কখন হয়?
ভরা জোয়ার বা তেজ কোটাল প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর ঘটে।
ভরা কোটাল এর কারণ লেখ?
পৃথিবীর সঙ্গে চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে মহাকর্ষ শক্তির আকর্ষণী বল বেশি হয়। এর প্রভাবে ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয়ে ভরা জোয়ারের উৎপত্তি ঘটে। নিম্নলিখিত দুটি তিথিতে তেজ কোটালের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
(i) অমাবস্যা তিথি : অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে একই সরলরেখায় আসার ফলে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে সমুদ্রের জল অত্যধিক স্ফীত হয়ে ভরা জোয়ার বা তেজ কোটালের সৃষ্টি করে।
(ii) পূর্ণিমা তিথি : পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে একই সরলরেখায় অবস্থান করলে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে ভরা জোয়ারের সৃষ্টি হয়।
মরা কোটাল কাকে বলে?
সূর্য, চন্দ্র পৃথিবীর সঙ্গে একই সরলরেখায় অবস্থান না করে পরস্পর সমকোণে অবস্থান করলে চাঁদের আকর্ষণশক্তিকে সূর্য দুর্বল করে দেয় বলে পৃথিবী পৃষ্ঠে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তা তত তীব্র হয় না বলে তাকে মরা কোটাল বা মরা জোয়ার বলে।
মরা কটাল কেন হয়?
সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীর দুই পাশে পরস্পরের সমকোণে অবস্থান করে বলে চাঁদের আকর্ষণ শক্তিকে সূর্য দুর্বল, করে দেয় বলে চাঁদের আকর্ষণে জোয়ারের বেগ বেশি হতে পারে না। এই কারণে মরা জোয়ারের সৃষ্টি হয়।
মরা কটাল কখন হয়?
মরা জোয়ার কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে ঘটে থাকে।
দিনে দুবার জোয়ার ও দুবার ভাটার কারণ :
পৃথিবী তার নিজ অক্ষের চারদিকে ২৪ ঘণ্টায় পুরো একবার আবর্তন করে। একই সঙ্গে চাঁদও তার নিজ কক্ষপথে একই দিকে অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্বে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। ফলে ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবীর প্রত্যেক স্থান একবার করে চাঁদের সামনে আসে। এভাবে পৃথিবীর যে স্থান চাঁদের সামনে আসে সেখানে মুখ্য জোয়ার এবং সেই স্থানের প্রতিপাদ স্থানে গৌণ জোয়ার হয়। আবার এদের সমকোণে অবস্থিত স্থানগুলিতে ভাটা হয়। এভাবেই ভু-পৃষ্ঠের কোনো জায়গায় দিনে দুবার জোয়ার ও দুবার ভাটা হয়।
জোয়ার ভাটা হয় এমন পাঁচটি নদীর নাম লেখ?
উঃ বিদ্যাধরী, হুগলি, হলদি, ইছামতি, মাতলা।
জোয়ার ভাটা হয় কোন নদীতে?
উঃ যে নদী সাগরে মিলিত হয়, সেই নদীতে মোহনার কাছে জোয়ার ভাটা হয়।
জোয়ারোভাটার শ্রেণীবিভাগ লেখ?
উঃ মুখ্য জোয়ার, গৌন জোয়ার, ভরা কোটাল, মরা কোটাল।
জোয়ার ভাটার প্রধান কারণ কয়টি?
উঃ দুটি, পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে সৃষ্ট বিকর্ষণ শক্তি ও চন্দ্র ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব।
জোয়ার ভাটার মরা কটাল কখন হয়?
উঃ কৃষ্ণা ও শুক্লা পক্ষের অষ্টমী তিথিতে।
জোয়ার ও ভাটার মধ্যে সময়ের পার্থক্য কত?
উঃ ৬ ঘন্টা ১৩ মিনিট।