১. খাবার তেল ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল ক্যাস্টর অয়েল।
একটি পরিষ্কার শুষ্ক টেস্টটিউবে ১ মিলি তেল নিয়ে তাতে ১০ মিলি আম্লিক পেট্রোলিয়াম ইথার মেশাতে হবে। ২ মিনিট জোরে ঝাঁকানোর পর ১বিন্দু অ্যামোনিয়াম মলিবডেট ঘোলাটে হয়ে গেলে ক্যাস্টার অয়েলের উপস্থিতি নির্দেশ করে ।
২. ঘি, মাখন ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল আলু মিষ্টি আলু বা অন্যান্য স্টার্চের গুরু বনস্পতি/মার্জারিন।
৫ মিলি নমুনা টেস্টটিউবে নিয়ে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করা হয়। তারপর কয়েক ফোঁটা আয়োডিন মেশানো হয়। মিশ্রণের রং নীল হয়ে গেলে ভেজাল আছে। ৫ মিলি নমুনার সঙ্গে ৫ মিলি ঘন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড টেস্টটিউবে মিশিয়ে তাতে কিছুটা চিনি মেশাতে হবে। ভালোভাবে দু-মিনিট ঝাঁকানোর পর পাঁচ মিনিট রাখা হয়। বেগুনি বা লালচে রং এলে ভেজাল আছে।
৩. মধু ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল চিনি,গুড়।
১) পোর্সেলিন পাত্রে ৫ মিলি মধুর নমুনা দিয়ে তাতে ৩ মিলি অ্যানিলিন ও ৭ মিলি ১:৩ হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের একটি মিশ্রণ মিশাতে হবে এবং সমস্ত মিশ্রণটি ভালোভাবে ঝাঁকাতে হবে। বেগুনি বা লাল রং এলে বুঝতে হবে ভেজাল আছে।
২) একটি তুলোর বাতি করে মধুতে ডুবিয়ে দেশলাই কাঠি দিয়ে জ্বালালে ভালভাবে জ্বললে খাঁটি মধু বোঝায়, জল জাতীয় কিছু মেশানো থাকলে ভালোভাবে জ্বলবে না বা জ্বালানোর সময় ফটফট আওয়াজ হবে।
৪. হলুদ, লঙ্কা, কারি পাউডার ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল রং।
কিছুটা নমুনাকে পেট্রোলিয়াম ইথারে নিষ্কাশিত করে ১৩ এন সালফিউরিক প্রভৃতি সাধারণ অ্যাসিড (13N Sulphuric Acid) গুঁড়ো মশলায় মেশানো হয়। এর ফলে লাল রং এলে ভেজাল রং আছে বলে নির্দেশিত হয়। ডিস্টিলড ওয়াটার মেশালে রং যদি চলে যায় তবে ভেজাল নেই বলে ধরা হয়।
৫. হলুদ গুড়ো ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল রঙিন কাঠের গুঁড়ো।
নমুনায় কয়েক ফোঁটা ঘন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড মেশানো হয়। বেগুনি রং - এর তাৎক্ষণিক উপস্থিতি যা জল মেশালে চলে যায়, নির্দেশ করে যে দ্রব্যটি খাঁটি। রং থেকে গেলে মেটানিল ইয়োলো মেশানো হয়েছে।
৬. লঙ্কা গুঁড়ো ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল ইট কাঁকর বা বালি গুঁড়ো।
ক্লোরোফর্ম ও কার্বন টেট্রাক্লোরাইড - এর মিশ্রণে নমুনা দ্রব্য মেশালে ভেজাল দ্রব্যগুলো নিচে থিতিয়ে পড়বে এবং সহজেই বোঝা যাবে।
৭. গোলমরিচ ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল পেঁপে বা বেরিবীজ।
কার্বন টেট্রাক্লোরাইড বা রেক্টিফায়েড স্পিরিট-এ ডোবালে পেঁপে বীজ ভেসে থাকবে এবং মরিচ নিচে পড়বে।
৮. কালোজিরা ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল কয়লার গুঁড়ো, রঞ্জিত ঘাস বীজ।
নমুনা দ্রব্যের কিছুটা নিয়ে হাতের তালুতে ঘষলে তালু কালো হয়ে গেলে ভেজাল আছে ।
৯. দুধ ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল জল।
১) ল্যাক্টোমিটারের রিডিং সাধারণভাবে ২৬-এর নিচে যেন না হয়।
২) একটি পালিস করা সমতল ক্ষেত্রকে আড়াআড়িভাবে ধরে তাতে দুধের একটা ফোঁটা ফেলতে হবে । খাঁটি দুধ হলে ফোঁটাটি হয় থেমে যাবে অথবা ধীরে ধীরে গড়িয়ে যাবে, পিছনে সাদা রেখার একটি চিহ্ন রেখে। দুধ জল মিশ্রিত হলে তৎক্ষণাৎ গড়িয়ে যাবে এবং পিছনে সাদা রেখার কোন চিহ্ন থাকবে না।
১০. মিষ্টি, মিষ্টান্ন, বিভিন্ন পানীয় ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল মেটালিক ইয়োলো স্যাকারিন।
নমুনা দ্রব্য থেকে গরম জলের সাহায্যে কিছুটা রং নিষ্কাশিত করা হয়। তাতে কয়েক ফোঁটা ঘন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড মেশালে যদি ম্যাজেন্টা, লাল রং উৎপন্ন হয়, তবে মেটানিল ইয়েলো আছে বলে নির্দেশিত হয়। ৫ থেকে ১০ গ্রাম পরিমাণের নমুনা দ্রব্যকে সমপরিমাণ জলের সঙ্গে টেস্টটিউবে নেওয়া হয়। কয়েক ফোঁটা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ও ১০ মিলি ইথার দ্রাবক ওই টেস্টটিউবে মিশিয়ে সাবধানে ঝাঁকাতে হয়, তারপর ইথার স্তরটি অন্য একটি টেস্টটিউব বা বিকারে ঢেলে নিয়ে বাষ্পীভূত করা হয়। এরপর অবশিষ্টাংশ-এ এক ফোঁটা গরমজল মিশিয়ে স্বাদ নেওয়া হয়। মিষ্টি স্বাদ স্যাকারিনের উপস্থিতি প্রমাণ করে।
১১. বরফি, লাড্ডু ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল তাবুক হিসাবে ভোজ্য রূপোর বদলে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার।
ফয়েলটি তুলে নিয়ে দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে ধরলে ছাই হলে ভেজাল, শক্ত ঢেলা পাকালে ভেজাল নয়।
১২. হওয়াই মিঠাই, লাল সরবত, মিষ্টি, মঠ ইত্যাদি ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল রোডামিন-বি।
এক চামচ জলে গুলে নিয়ে রোদে ধরলে আলোর বিচ্ছুরণ হলে বুঝতে হবে ভেজাল রং।
১৩. মুড়ি, দুধ ভ্যাজাল সনাক্তকরণ পদ্ধতিঃ
মিশ্রিত ভেজাল দ্রব্য হল ইউরিয়া।
খানিকটা মুড়ি ধুয়ে জল অথবা দুধ খানিকটা কাপে নিয়ে তাতে অড়হর ডাল বা সয়াবিনের গুড়ো মিশিয়ে অল্প তাপ দিয়ে সেই জল বা দুধে লাল লিটমাস পেপার ডোবালে যদি নীল হয়ে যায় তবে মুড়ি বা দুধে ভেজাল আছে।