ধূমপান সমাজের একটি ব্যাধি, যাতে একবার আসক্ত হয়ে গেলে ছেড়ে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যদিও এটা নির্ভর করে দৃঢ় মানসিকতার উপর। পৃথিবীতে একশাে কোটিরও বেশি মানুষ ধূমপানে আসক্ত এবং প্রায় প্রতি ২০ সেকেন্ডে একজনের তামাকের বিষক্রিয়াজনিত কারণে মৃত্যু হয়। আরও একটি মনে রাখার মতাে বিষয় হলাে মােট মৃত্যুর প্রায় ২০ শতাংশ মৃত্যু তামাক গ্রহণের ফলেই হয়।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন?
ধূমপান সিগারেট, বিড়ি, হুঁকো বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। তামাক হলাে একপ্রকার মাদক দ্রব্য। এতে উপস্থিত বিষাক্ত উপক্ষারটি হলাে নিকোটিন। তামাকে নিকোটিন ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে। তামাকের ধোঁয়ার কার্বন মনােক্সাইড, কারবাজোল, ভিনাইল ক্লোরাইড ইত্যাদি রাসায়নিক পদার্থ থাকে।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরঃ
ধূমপানের ফলে কোশবিভাজন দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে হলে দেহে ক্যানসার নামক মারণব্যাধির সূত্রপাত ঘটে। ক্রীড়াদক্ষতা উপরােক্ত সকল তন্থগুলির উপর নির্ভরশীল। ধূমপানের ফলে মানবশরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও তাদের মধ্যে সমন্বয় থাকে না, ফলে খেলােয়াড়ের সার্বিক ক্রীড়াদক্ষতা সামগ্রিকভাবে ব্যাহত হয়।
ধূমপানের প্রভাবঃ
ধূমপানের ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন তন্ত্রগুলির উপর কুপ্রভাব পড়ে, যার ফলে ব্যক্তির কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় ও স্বাস্থ্যের বিশেষ হানি ঘটায়। ধূমপানে আসক্ত ব্যক্তির দেহে নানা লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সেগুলি হলাে-
শ্বসনতন্ত্রের উপর ধূমপানের প্রভাবঃ
- (ক) শাসনালি ও কণ্ঠনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
- (খ) অতিরিক্ত মিউকাস (শ্লেষ্ম) জমে শ্বাসনালির পথ সংকীর্ণ হয়, ফলে ব্রংকাইটিস জাতীয় রােগ দেখা যায়। ধোঁয়ার প্রভাবে ফুসফুসের বায়ুথলিতে বায়ুর আদানপ্রদান ক্ষমতা কমে যায়, ফলে ফুসফুসের বায়ুথলি বিনষ্ট হয় ও ফুসফুস ফুলতে শুরু করে।
- (গ) ধোঁয়ার প্রভাবে ফুসফুসে নিকোটিন এবং বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের আস্তরণ পড়ে, ফলে ফুসফুস ধীরে ধীরে নষ্ট হয়।
- (ঘ) কাশি, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হতে পারে।
- (ঙ) ফুসফুসে রােগ সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
সংবহনতন্ত্রের উপর ধূমপানের প্রভাবঃ
- (ক) রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- (খ) ত্বকের রক্তনালিগুলি সংকুচিত হওয়ার ফলে ত্বকের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
- (গ) রক্তের অক্সিজেন পরিবহণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
- (ঘ) রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় ও রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা থাকে।
- (৬) রক্তনালির প্রাচীরে ফ্যাটি অ্যাসিড জমে যাওয়ায় হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়, ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
- (চ) অতিরিক্ত নিকোটিন হার্দ উৎপাদের পরিমাণ হ্রাস করে, যার ফলে রক্তনালিতে রক্তের গতি যথাযথ থাকে না, স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পেশি-কঙ্কালতন্ত্রের উপর ধূমপানের প্রভাবঃ
- (ক) কিছু কিছু পেশির সংকোচন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
- (খ) হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় ও হাড় ভঙ্গুরপ্রায় হয়।
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাবঃ
সামান্য পরিমাণে মাথাধরা, অনিদ্রা ও কখনাে-কখনাে স্নায়ুরােগ দেখা দিতে পারে।
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও জননতন্ত্রের উপর প্রভাবঃ
নিকোটিন হরমােন ক্ষরণের মাত্রা হ্রাস করায়-
- (ক) শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদন হ্রাস পায়
- (খ) শুক্রাণুসংখ্যা কমে যায়।
- (গ) মহিলাদের রক্তস্রাব অনিয়মিত হয় ও গর্ভধারণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।