শ্বেত রক্ত কণিকা কাকে বলে?
রক্তরসে উপস্থিত বর্ণহীন, বিভিন্ন আকৃতির নিউক্লিয়াসযুক্ত বৃহদাকৃতির রক্তকোশগুলিকে শ্বেতরক্তকণিকা বলে।
শ্বেত রক্ত কণিকার গঠনঃ
- শ্বেতরক্তকণিকার গঠন ও আকার পরিবর্তিনশীল। RBC-এর তুলনায় বড়াে, সাধারণত গােলাকার।
- এদের নিউক্লিয়াস বর্ণহীন, স্বচ্ছ ও বিভিন্ন আকৃতিযুক্ত।
আরো পড়ুনঃ লােহিত রক্ত কণিকা |
শ্বেত রক্ত কণিকা কত প্রকার ও কি কি?
WBC-এর সাইটোপ্লাজমে দানার উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতি, রঞ্জকের প্রতি WBC-এর সাইটোপ্লাজমীয় দানার আসক্তির উপর নির্ভর করে WBC দুই প্রকারের। এই দুই প্রকার শ্বেত রক্ত কণিকাকে আবার সর্বমোট পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- ইওসিনােফিল, বেসােফিল, নিউট্রোফিল এবং লিম্ফোসাইট, মনােসাইট।
(1) দানাদার শ্বেত রক্ত কণিকা—নির্দিষ্ট রঞ্জুকে রঞ্জিত করলে যেসব WBC-এর সাইটোপ্লাজমে দানা দেখা যায় তাদের গ্র্যানুলােসাইট বলে।
দানাদার শ্বেতরক্তকণিকা বৈশিষ্ট্য :
- নিউক্লিয়াস খণ্ডযুক্ত ও খণ্ডগুলি সূত্রবৎ অংশ দিয়ে জোড়া থাকে ।
- এ্যানুলােসাইট তিন প্রকারের—ইওসিনােফিল, বেসােফিল ও নিউট্রোফিল।
(2) দানাবিহীন শ্বেত রক্ত কণিকা—নির্দিষ্ট রঞ্জকে রঞ্জিত করলে যেসব WBC-এর সাইটোপ্লাজমে কোনাে দানা দেখা যায় না তাদের আগ্র্যানুলােসাইট বলে।
দানাবিহীন শ্বেতরক্তকণিকা বৈশিষ্ট্য :
- নিউক্লিয়াস বড়াে, গােলাকার কিন্তু অখণ্ডিত।
- এটি দুপ্রকারের—ছােটো গােলাকার নিউক্লিয়াসযুক্ত কোশগুলি লিম্ফোসাইট (ছােটো ও বড়াে হয়) এবং বড়াে বৃক্কাকৃতি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোশগুলি মনােসাইট।
শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপত্তিস্থল:
গ্রানুলােসাইট-লাল অস্থিমজ্জার মেগাক্যারিওসাইট কোশ এবং আগ্র্যানুলােসাইট—প্লিহা, লসিকাগ্রন্থি, টনসিল, থাইমাস ইত্যাদি। WBC তৈরির পদ্ধতিকে লিউকোপােয়েসিস বলে।
শ্বেত রক্ত কণিকা জীবনকাল ও পরিণতি:
WBC-দের আয়ু ১-১৫ দিন। এর পর এগুলি ভাঙে বা ধ্বংস হয়।
শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা:
পরিণত প্রাপ্তবয়স্ক লােকের প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে WBC-এর সংখ্যা 6000–8000)। কখনাে-কখনাে এই সংখ্যা স্বাভাবিকের থেকে হ্রাস পায়, একে লিউকোপেনিয়া বলে। সংক্রমণের ফলে WBC-এর সংখ্যা বেড়ে 20000-30000 হলে তাকে লিউকোসাইটোসিস বলে।
শ্বেত রক্ত কণিকা | শতকরা পরিমান |
নিউট্রোফিল | 60-70 |
মনােসাইট | 5-10 |
ইওসিনােফিল | 1- 4 |
লিম্ফোসাইট | 25-30 |
বেসােফিল | 0–1 |
শ্বেত রক্ত কণিকার কাজ কি :
- অতন্দ্রপ্রহরী—WBC অতন্দ্রপ্রহরীরূপে দেহকে রােগজীবাণুর থেকে রক্ষা করে।
- হেপারিন ক্ষরণ- বেসােফিল তঞ্জনরোধী বস্তু হেপারিন ক্ষরণ করে রক্তবাহের ভেতর রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না, ফলে রক্তের তারল্য বজায় থাকে।
- অ্যালার্জি প্রতিরােধ—হিস্টামিন দেহে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। দেহের যেখানে হিস্টামিন তৈরি হয় ওই জায়গায় ইওসিনােফিল জড়াে হয়ে অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি যৌগ গঠন করে হিস্টামিনকে নিষ্ক্রিয় করে এবং দেহকে অ্যালার্জি মুক্ত করে।
- ফ্যাগােসাইটোসিস-- কোনাে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু রক্তে প্রবেশ করলে নিউট্রোফিল ও মনােসাইট ফ্যাগােসাইটোসিস পদ্ধতিতে জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।
- অ্যান্টিবডি উৎপাদন-- লিম্ফোসাইট গামা-গ্লোবিউলিন অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে রােগ প্রতিরােধ করে।
- ট্রিপসিন ও পেপসিন সংশ্লেষ-- নিউট্রোফিল ট্রিপসিন এবং মনােসাইট ও লিম্ফোসাইট পেপসিন নামক উৎসেচক সংশ্লেষ করে। উৎসেচক দুটি গ্রাস করা ব্যাকটেরিয়াকে হজম করে দেহ থেকে অপসারণে সাহায্য করে।
শ্বেত রক্তকণিকার ও অন্যান্য রক্ত কণিকার ছবি |
১. শ্বেত রক্ত কণিকার আয়ুষ্কাল কত দিন?
উঃ শ্বেত রক্ত কণিকার আয়ু ১-১৫ দিন।
২. শ্বেত রক্ত কণিকার অপর নাম কি?
উঃ লিউকোসাইট
৩. শ্বেত রক্ত কণিকা কোথায় উৎপন্ন হয়?
উঃ গ্রানুলােসাইট-লাল অস্থিমজ্জার মেগাক্যারিওসাইট কোশ এবং আগ্র্যানুলােসাইট—প্লিহা, লসিকাগ্রন্থি, টনসিল, থাইমাস ইত্যাদি।
৪. শ্বেত রক্তকণিকা কমে গেলে কি হয়?
উঃ লিউকোপেনিয়া রোগ হয়।
৫. শ্বেত রক্তকণিকা কিভাবে দেহকে রক্ষা করে?
উঃ শ্বেত রক্তকণিকা অতন্দ্রপ্রহরীরূপে দেহকে রােগজীবাণুর থেকে রক্ষা করে।
৬. শ্বেত রক্ত কণিকা বৃদ্ধির উপায়?
উঃ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৭. শ্বেত রক্তকণিকা কয় প্রকার?
উঃ শ্বেত রক্তকণিকা পাঁচ প্রকার।
৮. শ্বেত রক্তকণিকা বাড়লে কি হয়?
উঃ লিউকোসাইটোসিস রোগ হয়।
৯. শ্বেত রক্তকণিকাকে দেহের প্রহরী বলা হয় কেন?
উঃ কোনাে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু রক্তে প্রবেশ করলে ঐ জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়াকে শ্বেত রক্তকণিকা ধ্বংস করে।
১০. শ্বেত রক্তকণিকা এর ইংরেজি নাম কি?
উঃ White Blood Corpuscles বা সংক্ষেপে WBC।
বিস্তারিত লিখা প্রয়োজন
উত্তরমুছুন