PC Header Top Ads

Type Here to Get Search Results !

Display Responsive Ads

চর্যাপদ প্রশ্ন উত্তর ও তথ্য

 

চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেন?

চর্যাগীতির পুতির কে আবিষ্কার করেন?

চর্যাগীতি কে আবিষ্কার করেন?

চর্যাপদের পদকর্তা কতজন?

চর্যাপদ কত সালে আবিষ্কৃত হয়?

 

✔️বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম গ্রন্থ চর্যাপদ।

✔️১৯০৭ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবার থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।

✔️চর্যাপদ আসলে সহজিয়া পন্থি বৌদ্ধ সাধকদের একটি ধর্মগ্রন্থ।

✔️চর্যাপদ রচিত প্রাচীন বাংলা ভাষায়।

✔️বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের একমাত্র লিখিত নিদর্শন হল চর্যাপদ।

✔️চর্যাপদ মূলত গানের সংকলন।

✔️চর্যাপদ, চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, চর্যাগীতিকোষ ও চর্যাগীতি নামেও পরিচিত।

✔️চর্যাচর্যবিনিশ্চয় এর অর্থ হলো "কোনটি আচরণীয় আর কোনটি নয়।"

 

চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেন? চর্যাগীতির পুতির কে আবিষ্কার করেন?


চর্যাপদ কি?

জীবনযাপন এর পদ্ধতিকে চর্যা বলে।
চর্যা থেকে বর্তমানে চর্চা শব্দের উৎপত্তি।
পদ শব্দের অর্থ চরণ বা পা।
অতএব, চর্যাপদ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় জীবনযাপনের পদ্ধতি বা আচরণ যে কবিতায় উল্লিখিত তাকে তাকে চর্যাপদ বলে।

 

চর্যাপদের রচনাকালঃ

চর্যাপদের রচনাকাল নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে। ডাক্তার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদ রচিত হয়েছিল ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে।
ডাক্তার সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে চর্যাপদ ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ এর মধ্যে রচিত হয়েছিল।

 

চর্যাপদ আবিষ্কারঃ

১৯০৭ সালে মহামহোপাধ্যায় ডাক্তার হরিপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজগ্রন্থগার "রয়েল লাইব্রেরী" থেকে "চর্যাচর্য বিনিশ্চয়" নামক পুঁথিটি আবিষ্কার করেন। এর সঙ্গে তিনি "ডাকার্নব" ও "দোহাকোষ" নামে আরও দুটি বই আবিষ্কার করেন।

 

চর্যাপদ নেপাল থেকে আবিষ্কার হলো কেন?

চর্যাপদ রচনা শুরু হয় পাল রাজাদের আমলে। পাল রাজারা ছিলেন বুদ্ধ ধর্মাম্বলি। পাল বংশের পরে বাংলায় আসে সেন বংশ, এই সেন বংশ ছিল হিন্দু ধর্মাম্বলি। পরবর্তীতে বৌদ্ধ সহজিয়াগন এদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বা পালিয়ে গিয়ে নেপালে আশ্রয় গ্রহণ করে, তারা সঙ্গে করে তাদের সাহিত্যকর্ম কে নিয়ে যায়। এই কারণে চর্যাপদ বাংলার বাইরে নেপালে পাওয়া যায়।

 

চর্যাগীতি প্রকাশকালঃ

১৯১৬ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে সবগুলো বই একসাথে "হাজার বছরের পুরানো বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা" নামে প্রকাশিত হয়।

 

চর্যাপদের ভাষাঃ

চর্যাপদ লিখিত বাংলা ভাষার আদি রূপে। এই ভাষার সাথে অসমীয়া, উড়িয়া, মৈথিলী ও বাংলা ভাষার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভাষা অনেকটা অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য।
ডাক্তার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদের ভাষা বঙ্গকামরূপী।
ডাক্তার সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ নামক গ্রন্থে প্রমাণ করেছেন যে পথ সংকলনটি আদি বাংলা ভাষায় রচিত।

চর্যাপদ এর ছন্দঃ

চর্যাপদ কোন ছন্দে রচিত তা জানা যায়নি। তবে আধুনিক ছন্দের বিচারে চর্যাপদ এর ছন্দ ও মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বলা যায়।

 

সন্ধ্যাভাষাঃ
চর্যাপদের ভাষাকে সন্ধ্যা ভাষা বলা হয় কেন?

সন্ধ্যা শব্দটি চর্যাচর্য বিনিশ্চয় ও সরোজবজ্রের দোহাকোষের টীকায় পাওয়া যায়।
সন্ধ্যা শব্দের অর্থ সম্বন্ধে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় লিখেছেন "সন্ধ্যাভাষার মানে, আলো-আঁধারি ভাষা, কতক আলো, কতক অন্ধকার, খানিক বোঝা যায়, খানিক বোঝা যায় না অর্থাৎ এই সকল উঁচু অঙ্গের ধর্ম কথার ভেতরে একটা অন্য ভবের কোথাও আছে।
পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে "সন্ধ্যা বাসার অর্থ সন্ধ্যা নামে প্রসিদ্ধ দেশের ভাষা। প্রাচীন আর্যবর্ত ও আসল বঙ্গদেশ এই উভয়ের মধ্যবর্তী প্রদেশের নাম সন্ধ্যা দেশ, এই সন্ধ্যা দেশের ভাষা সান্ধ্য ভাষা।
বুনুর্ফ সন্ধ্যাভাষার অর্থ করেছেন "প্রহেলিকাময় বাক্যালাপ।"
কার্ন সাহেব এর অর্থ করেছেন রহস্য।
ম্যাক্সমুলার করেছেন "প্রচ্ছন্ন উক্তি।"

 

চর্যাপদের পদ সংখ্যাঃ

ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে ৫০টি পদ ছিলো।
ডাক্তার সুকুমার সেন ও অন্যান্যদের মধ্যে চর্যাপদে মোট ৫১টি পদ ছিল। সর্বমোট পদ আবিস্কৃত হয়েছে সাড়ে ৪৬ টি। অন্য পদগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
চর্যাপদের প্রতিটি পদে ১০ টি করে চরন ছিল।
২৩ নম্বর পদটি আংশিক আকারের উদ্ধার করা হয়েছে এছাড়া ২৪, ২৫, ৪৮ নম্বর পদগুলো পাওয়া যায়নি।


চর্যাপদের পদকর্তাঃ

ডাক্তার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে 23 জন কবি ছিলেন
ডক্টর সুকুমার সেনের মতে ২৪ জন কবি ছিলেন।

২৪ জন কোবির নামগুলো হল (১) লুইপা (২) কুক্কুরী পা (৩) বিরুআ (৪) গুন্ডুরী (৫) চাটিল (৬) ভুসুক (৭) কাহ্ন (৮) কামলি (৯) ডোম্বী (১০) শান্তি (১১) মহিত্তা পা (১২) বীণা পা (১৩) সরহ পা (১৪) শবর পা (১৫) আজদেব (১৬) ঢেন্ডানপা (১৭) দারিক (১৮) ভাদে (১৯) তাড়ক (২০) কঙ্কন (২১) জঅনন্দি (২২) ধাম (২৩) তন্ত্রীপাদ (২৪) লাড়ী ডোম্বী

  • পদকর্তাদের নামের শেষে সম্মানসূচক পা যোগ করা হতো।
  • চর্যাপদ এর প্রাচীনতম কবি বলা হয় শবরীপা কে, কারণ তিনি কবিদের মধ্যে বয়স জ্যেষ্ঠ ছিলেন।
  • চর্যাপদের আদি কবি বলা হয় লুইপা কে, কারণ তিনি চর্যাপদ এর প্রথম পদ রচনা করেন।
  • চর্যাপদের আধুনিকতম কবি ছিলেন ভুসুকুপা। তিনি নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
  • চর্যাপদের কবিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদ রচনা করেছিলেন কাহ্নপা তিনি মোট ১৩ টি পদ রচনা করেছিলেন এই কারণে কাহ্নপা কে চর্যাপদের শ্রেষ্ঠ কবি বলে।

 

চর্যাপদের সমাজজীবনঃ

বাংলায় সেনরাজাদের যখন অধিপত্য, তখনই চর্যার গানগুলি রচিত হয়। ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বী সেন রাজাগন পরধর্মে অসহিষ্ণু ছিলেন। বর্ণাশ্রম প্রথা অনুসারে বেদাশ্রিত জনগোষ্ঠী ছিল অভিজাত আর বেদধর্ম ও বেদাচারের বাইরে জনগোষ্ঠী ছিল অস্পৃশ্য অন্ত্যজ। এই তাত্ত্বিক ভৌগলিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে চর্যাপদ রচিত।

চর্যাগীতির রচয়িতাগণ ডোম্বী, কামলি, শবর ইত্যাদি অন্ত্যজ শ্রেণীর লোক এবং চর্যাগীতির ডোমানী, শবর, চন্ডালী, ব্যাধ, জেলে, ধুনুরী ইত্যাদি পাত্র-পাত্রীও অস্পৃশ্য শ্রেণীর। সমজিক বিভাজনের স্পষ্ট রূপরেখা কাহ্নপাদের চর্যাগীতিতে প্রকাশ পেয়েছে।

উচ্চবর্ণের লোকেরা নগরে বাস করতো, আর ডোম, শবর প্রভৃতি নিম্নবর্ণের লোকজন নগরের বাইরে- জনপদ থেকে বহু দূরে পাহাড়ের, জঙ্গলে মালভূমিতে বাস করত। এদের স্পর্শে ব্রাহ্মণ্য সমাজ যাতে কলুষিত না হয় সেজন্যই শ্রেণী বৈষম্য মূলক ব্যবস্থা।

অন্ত্যজ শ্রেণীর আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিলনা। নানা বৃত্তিনির্ভর নিম্নবর্ণের জীবনচিত্র সজীব রুপে প্রকাশ পেয়েছে। ডোম, ব্যাধ, শুড়ি, তাঁতী ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর জীবন্ত-জীবিকা প্রকাশে তাঁত বোনা, চাঙ্গাড়ি তৈরি করা, খেয়া পারাপার করা, শিকার করা ইত্যাদি পরিচয় আছে।

দরিদ্রলাঞ্ছিত খেটে খাওয়া মানুষের জীবন চিত্র টেণ্টণপাদের ৩৩ সংখ্যক পদে পাওয়া যায়। পেটের জ্বালায় কেউ কেউ পদ্মের ডাঁটা খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্ত করতো। কেউ বা অভাবের তাড়নায় চুরি ডাকাতি করতে বাধ্য হতো, চুরির ভয়ে ঘরে তালা লাগানোর কথা আছে।

ব্যবহারিক জীবনে হাঁড়ি, ঘড়া, গাড়ু ইত্যাদি ব্যবহৃত হতো। মেয়েরা আয়না, কাঁকন, কুন্তল ইত্যাদি ব্যবহার করতো। ধনী ব্যক্তিরা খাটে শুয়ে কর্পূর মেশানো পানি খেতো। সমাজ জীবনে মদের আসক্তি ব্যাপক ছিল। যার ফলে মদ চোলাইয়ের ব্যবসা রমরমা ছিল।

চর্যাগীতিতে উল্লেখিত রাগ রাগিনীর নাম, বাদ্যযন্ত্র ও নাচ-গানের প্রসঙ্গ থেকে বোঝা যায়- চর্যার যুগে নাচ-গানের প্রধান ছিল। কাহ্নপাদের পদে নাচ-গান ও নাটকের কথা আছে।


সব দিক থেকে আলোচনা শেষে আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি সাধক কবিগণ আধ্যাত্ম পথের যাত্রী হয়েও সমাজ জীবনের মূল স্রোত ধারার সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করেছিলেন, তার জন্যই বাংলার প্রান্তিক ভূখণ্ডের জীবন্ত সমাজ চিত্র চার্যাগীতিতে প্রকাশ পেয়েছে।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Section