রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবক বা ফ্যাক্টরগুলির রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা উল্লেখ করো।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবক বা ফ্যাক্টরঃ
যে সব ফ্যাক্টর বা প্রভাবক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে নিচে তাদের ভূমিকা উল্লেখ করা হলাে।
(1) হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ক্ষমতাঃ
হৃৎপিণ্ডের সকল সংকোচন হার্দ-উৎপাদ, রক্তচাপ ও রক্তবাহের মধ্য দিয়ে রক্ত সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের প্রধান বিষয়, কারণ নিলয়ের প্রতিটি সফল সংকোচন মহাধমনিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ
রক্ত নিক্ষেপ করে। তাছাড়া সারা দেহে রক্ত প্রবাহের জন্য প্রয়ােজনীয় তাড়ন বল হৃৎপিণ্ডের পাম্প ক্রিয়ার ফলেই সৃষ্টি হয়।
(2) হার্দ উৎপাদঃ
হূৎ-উৎপাদের তারতম্যে রক্তচাপের পরিবর্তন ঘটে। হার্দ-উৎপাদ প্রধানত হৃৎপিণ্ডের সংকোচন বল, হৃৎস্পন্দন হার ও শিরারক্তের প্রত্যাবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। তাই এদের পরিবর্তন পরােক্ষভাবে
রক্তচাপের পরিবর্তন ঘটায়।
(3) রক্তের পরিমানঃ
রক্তের পরিমাণের পরিবর্তনে হার্দ উৎপাদের পরিবর্তন ঘটে যা সরাসরি রক্তচাপের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এর প্রধান কারণ হার্দ উৎপাদের বৃদ্ধিতে ধমনিতন্ত্রে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ধমনিগাত্র অত্যধিক প্রসারিত হয়। দেখা গেছে, রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সংকোচী রক্তচাপ ও প্রসারী রক্তচাপ উভয়ই বৃদ্ধি পায়।
(4) প্রান্তীয় বাধাঃ
দেহ প্রান্তের দিকে রক্তপ্রবাহ যে বাধার সম্মুখীন হয় তাকে প্রান্তীয় বাধা বলে। প্রান্তীয় বাধার প্রধান উৎস হল উপধমনি এবং রক্তজালক। এটি নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভরশীল। যথা— (1) রক্তের বেগ, (2) রক্তের সান্দ্রতা, (3) ধমনি গাত্রের স্থিতিস্থাপকতা, (4) রক্তবাহের ব্যাস, প্রান্তীয় বাধা
রক্তের বেগ ও সান্দ্রতার সঙ্গে সমানুপাতিক ; কিন্তু ধমনিগাত্রের স্থিতিস্থাপকতা ও রক্তবাহের ব্যাসের সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতিক।
(5) ধমনিগাত্রের স্থিতিস্থাপকতাঃ
ধমনিগাত্রের স্থিতিস্থাপকতার ওপর রক্তচাপ বিশেষভাবে নির্ভরশীল। স্বাভাবিকভাবে নমনীয় স্থিতিস্থাপক কলায় ধমনী নির্মিত। ধমনির স্থিতিস্থাপক ধর্মের জন্য রক্তপ্রবাহ ধমনিতে তাড়ণধর্মী হয়। রক্তজালিকা ও শিরাতে রক্তপ্রবাহ ধারাবাহিক। বৃদ্ধ বয়সে ধমনির স্থিতিস্থাপক কলাগুলি নষ্ট হয়ে যায় এবং ধমনিগাত্রে ক্যালশিয়াম, কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি অ্যাসিড সঞ্চিত হয়। এর ফলে ধমনির স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।
(6) রক্তের সান্দ্রতাঃ
রক্তের সান্দ্রতার পরিবর্তনে সংকোচী রক্তচাপ পরিবর্তিত হয়। রক্তের সান্দ্রতা প্রধানত প্রান্তীয় বাধার ওপর কাজ করে। কারণ সান্দ্রতার হ্রাস-বৃদ্ধিতে আণবিক ঘর্ষণেরও হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
(7) হরমােনঃ
অ্যাড্রিনাল মেডালা থেকে ক্ষরিত অ্যাডরিনালিন এবং পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত পিটুইট্রিন রক্ত নালির সংকোচন ঘটিয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। তাছাড়া বৃক্কে সংশ্লেষিত রেনিনের প্রভাবে উৎপন্ন অ্যানজিওটেনসিন রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং ব্রাডিকাইনিন রক্তনালির প্রসারণ ঘটিয়ে রক্তচাপ কমায়।
(৪) রক্তের পরিমাণঃ
রক্তের পরিমান বাড়লে ধমনির প্রাচীরে অধিক চাপ পড়ে ফলে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক চাপ বৃদ্ধি পায়।
(9) উৎসেচকঃ
বৃক্কে ধমনিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে বৃক্ক থেকে রেনিন নামক উৎসেচক নিঃস্বত হয়, যা থেকে প্লাজমার অ্যান্জিওটেনসিন-II নামক রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই রাসায়নিক রক্তবাহকে সংকুচিত করে রক্তচাপ বাড়ায়।
(10) স্নায়ুতন্ত্রঃ
স্নায়ুতন্ত্র ভ্যাসােমটর পদ্ধতির মাধ্যমে উপধমনির ব্যাস কমিয়ে ও বাড়িয়ে রক্তচাপ বাড়াতে ও কমাতে সাহায্য করে।