মশা নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি কি।
অথবা, মশা দমনের উপায়গুলি বর্ননা করো।
অথবা, মশার হাত থেকে বাঁচার উপায়গুলি কি।
মশা দমন বা নিয়ন্ত্রণ করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, এই উপায়গুলিকে আবার কতগুলি বিভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে সেগুলো নীচে আলোচনা করা হল।
1. আত্নরক্ষঃ
- (১) মশা উপদ্রত এলাকায় সূর্যাস্তের পর দেহ জামা-কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
- (২) জানলা ও দরজায় সূক্ষ্ম নেটের পর্দা লাগাতে হবে।
- (৩) মশারি খাটিয়ে শুতে হবে ।
- (৪) সন্ধ্যা নামির সঙ্গে সঙ্গে মশা ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। এই সময় ধুপ এবং ধুনো দিলে মশির উপদ্রপ আনেক কমে। আজকাল বিভিন্ন রাসায়নিক ধুপ যেমন, মরটিন ইত্যাদি বেরিয়েছে।
- (৫) মশক ক্রিম, যেমন - সিট্রোনেলা, ওডোমস, ইন্ডালোন প্রভৃতি ক্রিম ব্যাবহার করলে এদের গন্ধে মশা দেহের উপর বসতে পারে না।
- (৬) ঘরের দেওয়ালে রং করার সময় ক্রিয়োজোট নামক রাসায়নিক মিশিয়ে রং করলে এর মশা প্রবেশ করবে না।
2. পরিণত মশক ধ্বংসঃ
- বিভিন্ন রকম কীটনাশক প্রয়োগ করে পরিনত মশা দমন করা যেতে পারে। যেমন - DDT স্প্রে করতে পূর্ণাঙ্গ মশা যেমন মারা যায়, তেমনি DDT -র গন্ধে এরা অনেক দুরে চলে যায়।
- (২) সালফার ডাই-অক্সাইডের ধোঁয়া মশা তারাতে মোক্ষম দাওয়াই।
- (৩) জল ও তেলৈ সঙ্গে D.D.T. মিশিয়ে বিভিন্ন স্থানে স্প্রে করলে মাঠঘাট, জলস্থলে মশার উপদ্রব কমে যায়।
3. লার্ভা ধ্বংসঃ
- লার্ভা ধ্বংস করার জন্য যেসব ব্যাবস্থা নেওয়া দরকার তা হল -
- (১) তেলের ব্যবহার করতে হবে- মশার প্রজননস্থলে তেল , কেরোসিন তেল ইত্যাদি স্প্রে করলে মশার লির্ভা ধ্বংস হয় । এই তেলে মঝে মাঝে স্প্রে করলে লার্ভা ও পিউপা জন্মাতে পারে না।
- (২) পানামা লার্ভানাশক ব্যাবহারঃ জল ,কস্টিক সোডা , ফেনল ও রেজিনের সংমিশ্রণ তৈরি হয় পানামা লির্ভানাশক । পানামা খালে এই কীটনাশক ব্যবহার করে ব্যাপক সুফল পাওয়ায় এই কীটনাশক এরুপ নায়করন হয়েছে পানামা লার্ভা নালক 10,000 ভাগ জলের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করলে সব লার্ভা ধ্বংস হয় ।
- (৩)প্যারিস গ্ৰীনঃ এটি একরকম আর্সেনিক পাউডার। ধূলোর সঙ্গে মিশিয়ে মশার প্রজননস্থলে ছড়াতে হয় ।
- (৪) রাসায়নিক দ্রবণঃ এক ভাগ DDT দ্রবনের সঙ্গে 30 মিলিয়ন ভাগ জল মিশিয়ে এই দ্রবন তৈরি করা হয় ।এই দ্রবণ বিমান থেকে ছড়াতে হয় । ফলে বিস্তীর্ণ এলাকায় লার্ভা ধ্বংস হয়ে যায়। এই দ্রবণে লার্ভা ধ্বংস হতে 50 ঘন্টা সময় লাগে ।
4. প্রজনন ক্ষেত্র দূরীকরণঃ
- মশার ডিম পাড়ার স্থান হল - খানা-খন্দ, ছোট ছোট জলাশয়, আবদ্ধ পাত্রে জমা জল ইত্যাদি । এইসব স্থানে জল জমা বন্ধ করার জন্য ছোট ছোট জলাশয়গুলি ,বুজিয়ে ফেলতে হয় ।আবদ্ধ পাত্রে জল জমতে দেওয়া যাবে ।নালা -নর্দমা পরিচ্ছন্ন ও স্রোতযুক্ত রাখতে হবে।
5. জৈবিক নিয়ন্ত্রণঃ
- বহু মাছ মশার লার্ভা ও পিউপা খায়। ওইসব মাছ, যেমন- তেলাপিয়া, গ্যাম্বুসিয়া, মিনোস , তেচোখো, খলিসা, গাপ্পি ইত্যাদি মশার প্রজনন স্থানে ছেড়ে রাখলে লার্ভা ও পিউপার হার অনেক কমে যাবে এবং মশার জন্মহার হ্রাস পাবে।
6. জিনতত্ত্বগত নিয়ন্ত্রণঃ
- বর্তমানে ল্যাবোরেটরিতে জেনেটিক্স সংযুক্তিতে এমন একরকম পুরুষ মশা সৃষ্টি করা হয়েছে ,যারা স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলত হলে স্ত্রী মশাটি বন্ধ্যা হয়ে পড়েবে।