www.etcbangla.com |
নব্য প্রস্তর যুগ সম্বন্ধে আলোচনা করো?
সময়কালঃ
মধ্য প্রস্তর যুগের পরবর্তী নব্য প্রস্তর যুগের কালসীমা হল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 10,000 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 5,000 অব্দ। তবে ভারতে এ যুগের সূচনা হয় দেরিতে, 6000 খ্রিস্টপূর্বে। বালুচিস্তানের মেহেরগড়ে 6000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে বা তার কিছু আগে নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয় বলে ঐতিহাসিক ডি. পি. আগরওয়াল অভিমত দিয়েছেন।
হাতিয়ারঃ
এ যুগের হাতিয়ারগুলিতে ধারাবাহিক বিবর্তনের ছাপ সুস্পষ্ট। হাতিয়ারগুলি এসময় যথেষ্ট তীক্ষ্ণ, মসৃণ ও উন্নত হয়ে ওঠে। এ ছাড়া কুলো, হামানদিস্তা, শিলনোড়া, জাঁতা, হাতুড়ি, বাটালি, নেহাই প্রভৃতি যন্ত্রপাতির উদ্ভব এ যুগেই হয়। এ যুগে প্রাচীন প্রস্তর যুগের হাত-কুঠারের অভাবনীয় উন্নতি ঘটে। এ সময় কুঠারের সামনের দিকটি অনেক বেশি তীক্ষ্ণ এবং কাঠের হাতালযুক্ত হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিকাজ ও পশু শিকারের জন্য উন্নত হাতিয়ারের প্রোয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পায়।
কৃষির সূচনাঃ
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ কৃষিকাজের কৌশল আবিষ্কার করে এবং স্থায়ীভাবে এক জায়গায় বসবাস শুরু করে। ফলে খাদ্যসংগ্রহকারী থেকে এ যুগে মানুষ খাদ্য-উৎপাদনকারীতে পরিণত হয়। পূর্বে খাদ্য ও আশ্রয়ের নিশ্চিয়তা না থাকায় প্রকৃতিতে মানুষ ছিল বড়োই অসহায়। কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগে কৃষির আবিষ্কারের ফলে মানুষের সেই অনিশ্চিয়তা দূর হয়।
পশুপালনঃ
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ কৃষির প্রোয়োজনে পশুপালন করতে শুরু করে। পশুকে কৃষিজমিতে কাজে লাগিয়ে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। পরিবহনের কাজেও পোষ মানানো পশুকে কাজে লাগানো শুরু হয়। এই সময় দক্ষিণ এশিয়ায় হাতি ও মহিষকে এবং জর্ডনে কুকুর ও ছাগলকে প্রতিপালন করা শুরু হয়।
স্থায়ী বসতি নির্মাণঃ
নব্য প্রস্তর যুগে কৃষির আবিষ্কারের ফলে মানুষ নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ফলে মানুষের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটে। এসময় বন্যপশুর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয় মানুষের অনেকটা কমে যায়। তারা এ যুগের শেষদিকে কুটির বা গৃহনির্মাণ করতে শুরু করে। কুটির তৈরির জন্য তারা গাছের ডালপালা, লতাপাতা,ঘাস প্রভৃতি ব্যবহার করত। এই বসতি অঞ্চল ক্রমে গ্রামে পরিণত হয়। কোথাও কোথাও এই গ্রামগুলোকে কেন্দ্র করে নগর গড়ে ওঠার সম্ভবনা স্পষ্ট হয়ে ওঠৈ।
অন্যান্য অগ্রগতিঃ
কৃষির আবিষ্কারের ফলে নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্যের সংস্থান করতে সক্ষম হলে তাদের খাদ্যের জন্য আর বিশেষ চিন্তা করতে হত না। এর ফলে অবসরকালে মানুষ নিজেদের চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দিকে অগ্রগতির সুযোগ পায়। এসময়ে মানুষ আগুনের নানাবিধ ব্যবহার, চাকার ব্যবহার, মৃৎশিল্প, বয়নশিল্প, যানবাহন তৈরি, নৌকায় পাল খাটানো, গৃহনির্মাণ, পাথর সাজিয়ে "ডোলমেন" নামে সমাধি নির্মাণ প্রভৃতি করতে শেখে। এ যুগের শেষদিকে ধাতুর ব্যবহার শুরু হয়। এক কথায়, নব্য প্রস্তর যুগের স্থায়িত্বকাল পুরাতন প্রস্তর যুগের তুলনায় অনেক কম হলেও নব্য প্রস্তর যুগের অগ্রগতি ও প্রাপ্তি ছিল অনেক বেশি।
অস্তিত্বের নিদর্শনঃ
ভারতের মেহেরগড় সভ্যতা নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এ ছাড়া ইরাকের জারমো ও হাসুনা, জর্ডনের জেরিকো, দক্ষিণ মেসোপটেমিয়া, আনাতোলিয়া মালভূমি, সুইজারল্যান্ড, বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্গত বালুচিস্তান, ভারতের বিহার, ওড়িশা ও দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন স্থানে নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতির বিভিন্ন নিদর্শন মিলেছে।