PC Header Top Ads

Type Here to Get Search Results !

Display Responsive Ads

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির কারন সমূহ


 ভারত বিভাজনের কারন


মুসলিম লীগের মুসলিমের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার নীতি কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিয়েছিল?

১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় মহমেডান এডুকেশন কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই মুসলমানদের জন্য অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ নামক সংগঠন তৈরি হয়। ঐ সংগঠনটির লক্ষ্য ছিল মুসলমানদের স্বার্থ ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি নজর রাখা। পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ছিল লিগের অন্যতম উদ্দেশ্য।

১৯১০ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত মহমেডান এডুকেশন কনফারেন্সের সঙ্গেই লিগের কাজকর্ম চলতে থাকে। পরে অবশ্য সংগঠনদুটি আলাদা হয়ে গিয়েছিল। মুসলমানদের মধ্যে যারা কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন তাঁরা লিগ তৈরির বিরােধিতা করেছিলেন। কিন্তু বিরােধিতায় বিশেষ কাজ হয়নি। বরং ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে মুসলিম লিগের প্রসার ঘটে।


হিন্দু মসলিম সম্পর্কের অবনতির জন্য হিন্দু শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একাংশকে কেন দায়ী করা হয়?

সম্প্রদায় হিসেবে হিন্দু ও মুসলমানের স্বার্থ যে পরস্পর বিরােধী সেই ভাবনা তৈরি হওয়ার পিছনে হিন্দু শিক্ষিত মধ্যবিত্তদেরও যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। যেমন, বাংলায় হিন্দু ভদ্রলােক সম্প্রদায়ের মধ্যে মুসলমানদের সম্পর্কে অনেক সময়ই নেতিবাচক ও তাচ্ছিল্যের মনােভাব দেখা যেত। এমনকি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ও ঐতিহাসিকদের বিবরণ সম্পর্কেও বিদ্বেষ প্রকাশ পেত হিন্দু ভদ্রলােকদের লেখাপত্রে। এসবের উপর স্বদেশী নেতৃত্ব তাদের হিন্দু ধর্মীয় প্রতীককেন্দ্রিক রাজনীতির মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সামাজিক বিভাজন আরও প্রকট করে তােলেন।

গান্ধিজি খিলাফৎ সমস্যাকে অহিংস অসহযােগ আন্দোলনের অন্যতম দাবি রূপে অন্তর্ভুক্ত করেন। উদ্দেশ্য ছিল মুসলমান জনগােষ্ঠীর মধ্যে কংগ্রেসের ভিত্তি প্রসারিত করা। গান্ধি ও খিলাফতিরা একযােগে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযােগিতার কর্মসূচি প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে খিলাফৎ আন্দোলনও স্তিমিত হয়ে পড়ে।

 ১৯২২-২৩ খ্রিস্টাব্দে কয়েকটি জায়গায় দাঙ্গা হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের মধ্যে ভাঙন ধরায়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের খলিফা পদের অবসান ঘটে। তার ফলে খিলাফৎ আন্দোলন গতি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু যে ধর্মীয় ভাবাবেগ সৃষ্টি হয়েছিল, তা পরবর্তীকালে মুসলিম লিগের কর্মসূচিতে ছাপ ফেলেছিল। পাশাপাশি সমানভাবে বাড়তে থাকে উগ্র হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন। এই সময় মহাসভার মতাে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির শক্তি বাড়তে থাকে।


পাকিস্তান সৃষ্টির ইতিহাস

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের সভাপতি মহম্মদ ইকবাল এবং পরে চৌধুরি রহমৎ আলি পঞ্জাবে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে, বালুচিস্তান ও কাশ্মীর নিয়ে মুসলমানদের আলাদা ভূখণ্ড গঠন করার প্রস্তাব দেন। রহম আলি অস্পষ্টভাবে পাকিস্তান’-এর কথা উল্লেখ করেছিলেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডােনাল্ড এর ঘােষণায় সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার কথা বলা হয়। সেই ঘােষণায় ব্রিটিশ সরকারের বিভাজন ও শাসননীতিই প্রতিফলিত হয়েছিল।

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে কংগ্রেস ভালাে ফল করে। কিন্তু, সাধারণভাবে এমনকি মুসলমান জনসংখ্যা-প্রধান অঞ্চলগুলিতে লিগ বিশেষ সাফল্য পায়নি। বরং বিভিন্ন আঞ্চলিক দল এই নির্বাচনে খুবই সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু, নীতিগত সমস্যার কারণে আঞ্চলিক দলগুলির কয়েকটি ক্ষুন্ন হয়ে ক্রমে লিগের দিকে চলে যেতে থাকে। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের লাহাের অধিবেশনে মহম্মদ আলি জিন্নাহ সভাপতিত্ব করেন। ঐ অধিবেশনে মুসলমানদের পৃথক জাতি হিসেবে আলাদা একটি স্বশাসিত রাষ্ট্রের দাবি উঠে আসে।

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে বাংলা, সিন্ধুপ্রদেশ ও পঞ্জাব বাদে প্রত্যেকটি প্রদেশে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এই ফলাফল লিগের মধ্যে আশঙ্কার জন্ম দেয়। ফলে লিগের দাবিতে বিচ্ছিন্নতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী কংগ্রেস অন্তবর্তীকালীন সরকারে যােগ দিলেও, মুসলিম লিগ তাতে অসম্মত হয়। ১৬ আগস্ট থেকে পাকিস্তানের জন্য গণআন্দোলন আরম্ভ হয়। ঐ দিনে কলকাতায় ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়। কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ববঙ্গ বিহার, যুক্ত প্রদেশ, পঞ্জাব সরকারের প্রশাসনে অবস্থান বজায় রাখতে লিগ যােগ দিতে সম্মত হয়।


ভারত বিভাগ কি অনিবার্য ছিল

ভারতীয় গণপরিষদ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তার প্রথম সভা করে। কংগ্রেস পরিষদের সার্বভৌম মনে করলেও লিগ সেই মত মানতে অস্বীকার করে। এই পর্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলতেই থাকে। এই দুঃসময় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কংগ্রেস ও লিগ নেতৃত্ব ভারত বিভাজনকেই একমাত্র উপায় মনে করে। অবশেষে ব্রিটিশ সরকার ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট অনুমােদন করে। সেই মােতাবেক ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ১৪ এবং ১৫ আগস্ট পাকিস্তান ও ভারত নামে দুই স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।


দেশভাগ ও দাঙ্গা

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর স্বাধীনতার স্বাদ পেলেও দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, শরণার্থী সমস্যাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি জটিল আকার নিয়েছিল। দেশভাগের সবচেয়ে ভয়াবহ ও বেদনাদায়ক ফলশ্রুতি ছিল উদ্বাস্তু সমস্যা। লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন। এর প্রভাব ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়েছিল বাংলা ও পঞ্জাব প্রদেশে।





 ভারত বিভাজন ও প্রশ্ন উত্তর 


১. ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত করে কোন কমিশন?
উঃ রাডক্লিফ কমিশন।


২. ভারত পাকিস্তান কত সালে বিভক্ত হয়?
উঃ ১৯৪৭ সালে।


৩. কোন আইন দ্বারা ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়েছিল?
উঃ ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট।


৪. ভারত স্বাধীনতা আইন পাস হয় কত সালে?
উঃ ১৯৪৭ সালে।


৫. ভারত বিভাজনের ভিত্তিতে রচিত একটি সিনেমার নাম লেখ?
উঃ ১৯৯৪ সালে প্রকাশ পাওয়া ট্রেন টু পাকিস্তান।


৬. পাকিস্তানের ধারণাটি কে প্রথম দেন?
উঃ চৌধুরী রহমত আলী।


৭. পাকিস্তান প্রস্তাব কোথায় গৃহীত হয়?
উঃ ১৯৪০ সালে লাহোর অধিবেশনে।


৮. পাকিস্তান প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন?
উঃ এ কে ফজলুল হক।


৯. মুসলিম লীগের কোন অধিবেশনে ১৪ দফা দাবি পেশ করা হয়?
উঃ ১৯২৯ দিল্লি অধিবেশনে।


১০. মুসলিম লীগের কোন অধিবেশনে পাকিস্তান দাবি করা হয়?
উঃ ১৯৪০ লাহোর অধিবেশনে।


১১. ভারত বিভাগের পরিকল্পনা কে কবে ঘোষণা করে?
উঃ লর্ড মাউন্টব্যাটেন, ৩ই জুন ১৯৪৭ সালে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Section