মটর গাছঃ
মটর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম পিসাম স্যাটিভাম।
জগৎ | উদ্ভিদজগৎ | গোত্র | লিগিউমিনােসি |
উপজগৎ | সপুষ্পক | উপগােত্র | প্যাপিলিওনেসি |
বিভাগ | গুপ্তবীজী | গণ | পিসাম |
শ্রেণি | দ্বিবীজপত্রী | প্রজাতি | স্যাটাইভাম |
মটর গাছের ছবি |
মটর গাছের বর্ণনাঃ
মটর গাছের বৈশিষ্ট্য।
বহিরাকৃতিঃ
মটর গাছ দ্বিবীজপত্রী, বর্ষজীবী, বিরুৎ জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ। মটর গাছের সমগ্র দেহটি দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত, যথা—মূল ও বিটপ।
A. মূলঃ
মটর গাছের যে অংশটি মাটির নীচে অবস্থান করে, তাকে মূল বলে। মটর গাছের মূল বিভিন্ন অংশে বিভক্ত। যথা—
1. প্রধান মূলঃ
এটি কাণ্ডের গােড়া থেকে সােজা মাটির নীচে প্রবেশ করে। এটি মূলত্র অঞ্চল, মূলরােম অঞ্চল, বর্ধনশীল অঞ্চল এবং স্থায়ী অঞ্চলে বিভক্ত।
(a) মূলত্র অঞ্চল:
প্রধান মূলের একেবারে অগ্রভাগে টুপির মতাে যে অংশটি থাকে, তাকে মূলত্র বলে। মূলের মূল সংলগ্ন অঞ্চলকে মূলত্র অঞ্চল বলে। এটি মূলের অগ্রভাগকে মাটির ঘর্ষণজনিত আঘাত থেকে রক্ষা করে।
(b) মূলরােম অঞ্চলঃ
মূলত্রের কিছু ওপরে যে অসংখ্য এককোশী রােমগুলি থাকে, তাদের মূলরােম বলে। মূলের মূলরােম বেষ্টিত অংশটিকে মূলরােম অঞ্চল বলে। মূলরােম মাটি থেকে জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ শােষণ করে।
(c) বর্ধনশীল অঞ্চলঃ
মূলত্র ও মূলরােম অঞ্চলের মধ্যবর্তী অংশটিকে বর্ধনশীল অঞ্চল বলে। এই অংশটি মূলকে লম্বায় বৃদ্ধি হতে সাহায্য করে।
(d) স্থায়ী অঞ্চলঃ
এটি মূলরােম অঞ্চলের ওপরের অংশ। এই অংশটির বৃদ্ধি সীমিত বা বৃদ্ধি হয় না। এই অঞ্চল থেকে শাখা মূল সৃষ্টি হয়।
2. শাখা-প্রশাখা মূলঃ
প্রধান মূল থেকে যে মূলগুলি সৃষ্টি হয়, তাদের শাখামূল এবং শাখামূল থেকে যে মূলগুলি সৃষ্টি হয়, তাদের প্রশাখামূল বলে।
3. অর্বুদঃ
মটর গাছের মূলের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুটির মতাে অংশ দেখা যায় ; এদের অর্বুদ বলে। এই অবুদে নাইট্রোজেন স্থিতিকারী ব্যাকটেরিয়া রাইজোবিয়াম অবস্থান করে।
B. বিটপঃ
এটি মাটির ওপরের বায়ব অংশ। এটি কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা, পাতা, ফুল, ফল এবং বীজ নিয়ে গঠিত।
1. কাণ্ডঃ
বিটপের প্রধান অক্ষটিকে কাণ্ড বলে। মটর গাছের কাণ্ডটি সরু, নরম ও দুর্বল প্রকৃতির এবং সবুজ বর্ণের। কাণ্ডে পর্ব, পর্বমধ্য, কাক্ষিক মুকুল এবং অমুকুল থাকে। কাণ্ড শাখা-প্রশাখা, পাতা, ফুল, ফল ইত্যাদি ধারণ করে।
2. পাতা :
কাণ্ডের পর্ব থেকে পাতা উৎপন্ন হয়। মটর গাছের পাতা পক্ষল যৌগিক। পত্রকগুলি পত্ৰক-অক্ষের উভয় পাশে প্রতিমুখভাবে অবস্থান করে। পত্রমূলের গােড়ায় উপপত্র দুটি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাতার ফলকের মতাে আকৃতির হয়। পক্ষল যৌগিক পত্রের অগ্রস্থ কয়েকটি পত্রক পরিবর্তিত হয়ে প্যাঁচালো স্প্রিংয়ের মতো আকর্ষে পরিণত হয়। এই আকর্ষের সাহায্যে মটর গাছ কোনো অবলম্বনে জড়িয়ে উপরে উঠে।
3. ফুলঃ
মটর গাছের পুষ্পবিন্যাস অনিয়ত বা রেসিমােজ প্রকৃতির। ফুলগুলি নীল বা বেগুনি রংয়ের এবং সম্পূর্ণ, অসমাঙ্গ, একপ্রতিসম, প্রজাপতির মতাে। বৃতি পাঁচটি যুক্ত বৃত্যংশ নিয়ে গঠিত। দলমণ্ডল পাঁচটি মুক্ত দলাংশ বা পাপড়ি নিয়ে গঠিত। সর্ববহিঃস্থ বৃহৎ পাপড়িটি বিষম এবং এটি ধ্বজা বা স্ট্যান্ডার্ড বা ভেক্সিলাম নামে পরিচিত।
পার্শ্ববর্তী দুটি সমান মাপের পাপড়িকে একত্রে পক্ষ বা উইং বা অ্যালী বলে এবং সর্বাপেক্ষা ভেতরের দুটি অপেক্ষাকৃত ছােটো দলদুটিকে তরীদল বা কীল বা ক্যারিনা বলে। ফুলে পুংকেশরের সংখ্যা দশটি। এরা দুটি গুচ্ছে অবস্থান করে। নয়টি একসঙ্গে এবং একটি পৃথক থাকে। পুংধানী দু-প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট। ফুলে একটিমাত্র গর্ভপত্র থাকে। এটি গর্ভমুণ্ড, গর্ভদণ্ড ও গর্ভাশয় নিয়ে গঠিত। গর্ভাশয় অধিগর্ভ ও এক প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট।
4. ফলঃ
মটরফল স্ফীত, লম্বাটে, সবুজ, নীরস, বিদারী এবং লিগিউম প্রকৃতির।
5. বীজঃ
মটর বীজ গােলাকার হালকা হলুদ বা সবুজ রংয়ের। মটর দ্বিবীজপত্রী ও অসস্যল বীজ। মটর বীজ বীজত্বক ও অন্তর্বীজ নিয়ে গঠিত। বীজত্বকের বাইরের পুরু, শক্ত ও হালকা হলুদ বা সবুজ রংয়ের অংশটিকে বীজ বহিঃত্বক বা টেস্টা বলে এবং ভেতরের পাতলা অর্ধস্বচ্ছ এবং সাদা রংয়ের অংশটিকে বীজ অন্তঃস্ত্বক বা টেগমেন বলে।
বীজত্বকের বাইরের একটি ক্ষতচিহ্ন থাকে। যার সাহায্যে বীজটি ভেতরের প্রাচীরে আটকে থাকে। এই ক্ষতচিহ্নটিকে ডিম্বনাভি বা হাইলাম বলে। ডিম্বনাভির ঠিক ওপরে একটি ক্ষুদ্র রন্ধ্র থাকে, একে ডিম্বকরন্ধ্র বা মাইক্রোপাইল বলে। অন্তর্বীজ দুটি বীজপত্র, একটি ভূণাক্ষ নিয়ে গঠিত। ভূণাক্ষ পর্বসন্ধি, ভৃণমূল এবং ভূণমুকুল নিয়ে গঠিত।