গৌতম বুদ্ধের জীবনীঃ
অথবা
গৌতম বুদ্ধ সম্বন্ধে আলোচনা করুনঃ
গৃহত্যাগের পর গৌতম বুদ্ধ দীর্ঘদিন কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন ও তপস্যার পর দিব্যজ্ঞান লাভ করেন এবং "বুদ্ধ" বা "মহাজ্ঞানী" হয়ে ওঠেন। |
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে যারা প্রতিবাদী ধর্মকে ভারত তথা বিশ্বে সর্বাধিক জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন গৌতম বুদ্ধ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। গৌতম বুদ্ধের এই কৃতিত্বের জন্য ইতিহাসবিদ ড. এ. এল. বাসাম বলেছেন যে, "বুদ্ধ ছিলেন এতাবৎকালের ভারতের শ্রেষ্ঠ সন্তান।" বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রন্থ যেমন "জাতক", "সূত্তনিকায়", "মহাবংশ", "দীপবংশ", "ললিতবিস্তার", "বুদ্ধচরিত", প্রভৃতি থেকে গৌতম বুদ্ধ ও তার প্রবর্তিত বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।
1. গৌতম বুদ্ধের জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ
বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে নেপালের তরাই অঞ্চলের কপিলাবস্তুর লুম্বিনী উদ্যানে শাক্য নামে এক ক্ষত্রিয় রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শুদ্ধোধন ছিলেন কপিলাবস্তুর রাজা। তার মায়ের নাম ছিল মায়াদেবী। বুদ্ধের জন্ম তারিখ সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও অধিকাংশ ইতিহাসবিদ 566 খ্রিস্টপূর্বাব্দকে গৌতম বুদ্ধের জন্মকাল হিসাবে মেনে নিয়েছেন।
2. মহাভিনিষ্ক্রমণঃ
রাজকীয় বিলাস-বৈভব গৌতম বুদ্ধের মনকে মোটেই আকৃষ্ট করতে পারেনি। মানবজীবনের হতাশা, দুঃখ, জরা-ব্যাধি প্রভৃতির চিন্তা তাকে আকুল করে তোলে। তিনি সংসার সম্পর্কে ক্রমে উদাসীন হয়ে পড়লে পিতা শুদ্ধোধন মাত্র 16 বছর বয়সে তাঁকে গোপা বা যশোধরা নামে সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন। ক্রমে সংসার জীবনে দুঃখ, জরা-ব্যাধি এবং মৃত্যুর বিষয়গুলি গৌতম বুদ্ধকে খুব ভাবিয়ে তোলে। বৌদ্ধধর্মে এই তিনটি বিষয়কে "ত্রিতাপ" বলে। মানবজীবন থেকে "ত্রিতাপের যন্ত্রণা" মোচনের জন্য তিনি উদ্গ্রীব হয়ে ওঠেন। 29 বছর বয়সে রাহুল নামে তার এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। গৌতম সংসারের মায়ার বন্ধন ছিন্ন করতে রাজকীয় ঐশ্বর্য, পুত্র রাহুল ও স্ত্রী যশোধরাকে ত্যাগ করে একদিন গভীর রাতে তিনি গোপনে গৃহত্যাগ করেন। তাঁর এই গৃহত্যাগের ঘটনা "মহাভিনিস্ক্রমণ" নামে পরিচিত।
3. গৌতম বুদ্ধের দিব্যজ্ঞান লাভঃ
গৃহত্যাগের পর গৌতম বুদ্ধ দীর্ঘদিন কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন ও তপস্যার পর দিব্যজ্ঞান লাভ করেন এবং "বুদ্ধ" বা "মহাজ্ঞানী" হয়ে ওঠেন। এসময় থেকে তিনি "গৌতম বুদ্ধ" বা 'তথাগত' নামে পরিচিত হন।
4. গৌতম বুদ্ধের ধর্মপ্রচারঃ
দিব্যজ্ঞান লাভের পর গৌতম বুদ্ধ মানবকল্যাণের কথা ভেবে তাঁর মতাদর্শ প্রচার করেন।
ধর্মচক্রপ্রবর্তনঃ তিনি সর্বপ্রথম সারানাথের মৃগদাবে তাঁর পাঁচজন অনুরাগীর মধ্যে তাঁর ধর্মমত প্রচার করেন এবং তাঁদের বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত করেন। এরা হলেন কৌন্ডিণ্য, ভদ্রিক, অশ্বজিৎ, বাষ্প এবং মহানাম। এই ধর্মপচারের ঘটনা বৌদ্ধধর্মে "ধর্মচক্রপ্রবর্তন" নামে পরিচিত।
দীর্ঘকাল ধর্মপ্রচারঃ এরপর দীর্ঘ 45 বছর ধরে তিনি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানে তাঁর ধর্মমত প্রচার করেন। মগধের রাজা বিম্বিসার ও অজাতশত্রূ, কোশল-রাজ প্রসেনজিত ও তাঁর স্ত্রী মল্লিকা, পন্ডিত সারিপুত্ত, ব্যবসায়ী অনাথপিন্ডক, পতিতা আম্রপালি, নাপিত উপালি প্রমুখ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
5. গৌতম বুদ্ধের দেহত্যাগঃ
486 খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে আশি বছর বয়সে উত্তরপ্রদেশর গোরক্ষপুর জেলার কুশীনগরে তিনি দেহত্যাগ করেন। বুদ্ধের দেহত্যাগের ঘটনা "মহাপরিনির্বাণ" নামে পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ
নদীমাতৃক সভ্যতা গড়ে ওঠার কারণ
Current Affairs 21 সেপ্টেম্বর 2020 সম্প্রতি ঘটনা
Sooooooo gooooooooooooooooood
উত্তরমুছুন